মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বিপর্যস্ত ৭০ হাজার কোটি টাকার কাগজ শিল্প

এক মাসের ব্যবধানে রপ্তানি কমে গেছে ১১ শতাংশ, নগদ সহায়তা ৩০ শতাংশে উন্নীত করার সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারী বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে ৭০ হাজার কোটি টাকার কাগজ শিল্পে। করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় একদিকে পেপারমিলগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে রপ্তানিতেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। গত এপ্রিল পর্যন্ত যে শিল্পের রপ্তানি আয় ছিল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে গত মে মাসে সেই আয় প্রায় (-) ১১ শতাংশ নেতিবাচক হয়ে গেছে। এর ফলে এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা হুমকিতে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে বাঁচাতে নগদ সহায়তা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কাগজ শিল্প খাত সংশ্লিষ্টরা। 

সূত্রগুলো জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে নগদ সহায়তাপ্রাপ্ত বিদ্যমান রপ্তানি খাতের পাশাপাশি নতুন করে আর কোন কোন খাত বা পণ্য রপ্তানি প্রণোদনা পেতে পারে তা পর্যালোচনার জন্য রবিবার একটি সভা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত ওই সভায় কাগজ শিল্পের নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ)।

কাগজ শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতের মধ্যে কাগজ শিল্পখাত অন্যতম।

স্থানীয় বাজারে চাহিদার  অপ্রতুলতার কারণে রপ্তানি বৃদ্ধি করা ছাড়া দেশীয় কাগজ মিলসমূহের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এই শিল্পের উৎপাদিত পণ্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি না করলে দেশের কাগজ প্রকল্পগুলোর উৎপাদিত কাগজের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের অভাবে এই শিল্পখাত নিশ্চিতভাবেই রুগ্ন শিল্পে পরিণত হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে স্থাপিত কাগজ মিলের সংখ্যা ১০৬টি। এসব মিলের মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিকটন। এর মধ্যে স্থানীয় চাহিদা মাত্র ৬ লাখ মেট্রিকটন। স্থানীয় চাহিদার অপ্রতুলতার কারণে এরই মধ্যে ৬৪টি মিল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অবশিষ্ট ৪২টি মিল কোনোরকমে ধুঁকে ধুঁকে চলছে। বিপিএমএর সচিব নওশেরুল আলম বলেন, একসময়  দেশের কাগজশিল্প ছিল পুরোটাই আমদানিনির্ভর। এর ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো পণ্যটি আমদানিবাবদ। এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে সম্ভাবনাময় এই পণ্যটি। এর ফলে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে, তেমনি আমদানি বিকল্প পণ্য হিসেবে সাশ্রয়ও করছে বিপুল পরিমাণ মুদ্রা। তবে করোনা সঙ্কট এই খাতে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এই অবস্থায় নগদ সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো না হলে সম্ভাবনাময় এই খাতটিতে মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি হবে। 

বিপিএমএর সচিব জানান, দেশীয় কাগজ শিল্প একটি শ্রমঘন উৎপাদন শিল্প। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। উপরন্তু  দেশের কাগজ মিলগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কাগজ, নিউজপ্রিন্ট ও কাগজজাতীয় পণ্য উৎপাদন করে সব প্রকার কাগজের দেশীয় চাহিদা সম্পূর্ণ মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম। বিগত কয়েক মাসে দেশীয় কাগজ মিলগুলো গড়ে প্রায় ৩০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য ৩০টির অধিক দেশে রপ্তানি করেছে। বর্তমান নগদ সহায়তার পরিমাণ ১০ শতাংশ হতে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলে ভবিষ্যতে পণ্যটির রপ্তানির পরিমাণ প্রতিমাসে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে। এতে করে এই খাতে যেমন নতুন বিনিয়োগ আসবে, সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান।

সর্বশেষ খবর