মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

রপ্তানিমূল্যের ওপর নগদ সহায়তা চান গার্মেন্ট মালিকরা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

তৈরি পোশাক খাতের জন্য ঘোষিত নগদ সহায়তা (ক্যাশ ইনসেনটিভ) নিয়ে জটিলতার অভিযোগ তুলে গার্মেন্ট মালিকরা এবার প্রত্যাবাসিত রপ্তানিমূল্যের ওপর প্রণোদনা সহায়তা চেয়েছেন। পোশাক মালিকদের দাবি, নগদ সহায়তার ক্ষেত্রে তাদের নানা ধরনের জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের অস্পষ্টতা নিয়ে এক ধরনের জটিলতা হচ্ছে। এ ছাড়া রপ্তানি আয় নিরূপণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অডিটেও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী গার্মেন্ট মালিক যদি ১০০ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেন, তবে তা থেকে কমপক্ষে ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের (স্থানীয়ভাবে ভ্যালু অ্যাড) অর্থ বাদ দিয়ে বাকি ৮০ ডলারের ওপর নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। গার্মেন্ট মালিকরা চাইছেন শতভাগ রপ্তানিমূল্যের ওপর নগদ সহায়তা। সূত্রগুলো জানায়, কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে রপ্তানি খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো খতিয়ে দেখে প্রণোদনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি সুপারিশ পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই সুপারিশ তৈরির লক্ষ্যে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উইং কর্তৃক আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় এসব দাবি উঠে আসে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নগদ সহায়তা নিয়ে অডিট জটিলতার কথা জানিয়েছেন তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। খুব দ্রুত বিষয়টির সমাধান করা হবে। সূত্রগুলো জানায়, বর্তমানে পোশাক খাতে চার ধরনের নগদ সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা বাবদ চার শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়। বস্ত্র খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অতিরিক্ত সুবিধা (প্রচলিত নিয়মের) বাবদ চার শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। নতুন পণ্য/নতুন বাজার (বস্ত্র খাত) সম্প্রসারণ সহায়তা (আমেরিকা/ কানাডা/ ইইউ ছাড়া) বাবদও চার শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ইউরো জোনে বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকদের জন্য (বিদ্যমান চার শতাংশের অতিরিক্ত) দুই শতাংশ দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গত বছর আগস্টে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সিদ্ধান্তে নতুন এক শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়, যার ফলে ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডায় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এক শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী মোট রপ্তানিমূল্যের ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজন বাবদ অর্থ বাদ দিয়ে ৮০ ভাগ রপ্তানিমূল্যের ওপর হিসাব করলে প্রকৃতপক্ষে চার শতাংশের স্থলে তিন দশমিক দুই শতাংশ বা এরও কম নগদ সহায়তা পাওয়া যায়। এই নগদ সহায়তা দেওয়ার আগে আবার তিন ধরনের অডিটের মুখোমুখি হতে হয়। প্রথমে বাণিজ্যিক অডিটের মাধ্যমে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা হিসাব করেন, তারপর বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট অ্যান্ড ইন্সপেকশন টিম অডিট করে এবং সর্বশেষ স্থানীয় রাজস্ব অডিট অধিদফতরের অডিট শেষ হলে নগদ সহায়তা পাওয়া যায়। আবার অডিটের কারণে নগদ সহায়তার সার্টিফিকেট পেতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছয় মাস থেকে এক বছর বা এরও বেশি লেগে যায়। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জটিলতা এবং অডিট জটিলতা এই দুই জটিলতা দূর করে প্রণোদনাপ্রাপ্ত অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের মতো পোশাক খাতকেও যাতে প্রত্যাবাসিত রপ্তানিমূল্যের ওপর প্রণোদনা দেওয়া হয়, সরকারের কাছে সেই দাবি জানিয়েছি আমরা।’

সর্বশেষ খবর