লকডাউনে বদলে গেছে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার। রিকশার জট আর মানুষের উপস্থিতিতে যে এলাকা সব সময় রমরমা হয়ে থাকত, সেটি এখন খাঁ খাঁ করছে। রাস্তায় নেই মানুষের কোলাহল, যানবাহনের ছুটে চলা। লকডাউন কঠোরভাবে পালনে টহলে আছে সেনাবাহিনী। মাঠে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ আর ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পূর্ব রাজাবাজার এলাকা মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে লকডাউন করা হয়েছে। কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাত থেকেই কঠোর অবস্থানে প্রশাসন। পূর্ব রাজাবাজারের ৮টি প্রবেশপথের মধ্যে শুধু আইবিএ হোস্টেলের পাশেরটি খোলা রয়েছে। কিন্তু সেই গেট দিয়েও সাধারণ মানুষকে ঢুকতে বা বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। এই এলাকায় প্রায় ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন কাউন্সিলরের নির্দেশে। এর আগে সোমবার ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলার লক্ষ্যে ডিএনসিসি এলাকার জন্য গঠিত কমিটির এক অনলাইন সভায় পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান বলেন, মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে পূর্ব রাজাবাজার এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সড়ক। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এ এলাকায়। বেরও হতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি জানান, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে পূর্ব রাজাবাজার এলাকার কর্মহীন, অসহায় ও দুস্থ ৩ হাজার মানুষের একটি তালিকা করা হয়েছে। তাদের ডিএনসিসি থেকে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া অন্যরা অনলাইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা করতে পারবেন। প্রশিক্ষিতরা বাসায় সেসব নিত্যপণ্য পৌঁছে দেবেন। এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পূর্ব রাজাবাজারের নাজনীন স্কুলের গলি, গির্জা গলি, ইন্দিরা রোড মসজিদ গলি, বৌবাজার গলি, পূর্ব রাজাবাজারের সঙ্গে পশ্চিম রাজাবাজারের সংযোগ গলি, আলিফ অ্যাম্বুলেন্স গলি, ডা. কবির চৌধুরী চেম্বার গলি এবং তেজগাঁও কলেজ ছাত্রাবাসের পাশের গলি ছিল বন্ধ। কাউকে ওই এলাকা থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। কাউকে প্রবেশও করতে দেওয়া হয়নি। সাধারণ যান চলাচল ও ফার্মেসি ছাড়া দোকানপাটও ছিল বন্ধ। তবে গ্রিন রোডের আগোরার পাশের একটি গলি বন্ধ থাকলেও বিচ্ছিন্নভাবে কাউকে কাউকে সেটি টপকে ভিতরে যেতে দেখা গেছে। সেনা ও পুলিশের টহল ছিল সড়কে। জরুরি প্রয়োজনে শুধু নাজনীন স্কুলের গলি দিয়ে চলাচলের সুযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানেও কঠোর ছিল পুলিশ। জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার ২০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। পূর্ব রাজাবাজার নাজনীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ডিএনসিসির ওয়ার্ড কাউন্সিলর, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), এটুআই, ই-কমার্স অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এলাকার অসুস্থ রোগীদের জন্য চালু করা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের টেলিমেডিসিন সার্ভিস। এ ছাড়া কভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এটি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বুথটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক।