বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

এবার ভার্চুয়াল হাই কোর্টে জাল নথি দিয়ে জামিন

আইনজীবীকে মামলা পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা, পাঁচ আসামিকে গ্রেফতারের নির্দেশ

আরাফাত মুন্না

নিয়মিত হাই কোর্টে জাল নথি দাখিল করে জামিন নেওয়ার ঘটনা পুরনো। তবে এবার ভার্চুয়াল হাই কোর্টে জাল নথি দাখিল ও তথ্য গোপন করে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন হত্যা মামলার পাঁচ আসামি। খুলনার দিঘলিয়ার টিপু শেখ হত্যা মামলার এসব আসামি সৃজন করা এজাহার ও প্রাথমিক তথ্যবিবরণী দাখিল করে ১৮ মে নেয় ভার্চুয়াল হাই কোর্ট থেকে জামিন। জামিনের ওই আবেদনে মামলার চার্জশিট দাখিল হওয়া ও আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার তথ্যও গোপন করা হয়েছে। নকল ও আসল, দুই ধরনের নথিপত্রই বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে রয়েছে।

এদিকে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে জানানো হলে গতকাল বিষয়টি জামিন প্রদানকারী ভার্চুয়াল হাই কোর্টের নজরে আনেন তিনি। পরে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ ওই পাঁচ আসামির জামিন বাতিল করে এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। অন্যথায় তাদের গ্রেফতারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে খুলনার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবু হেনা মোস্তফা কামালকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়ার পাশাপাশি আপাতত তাকে ভার্চুয়াল আদালতে মামলা পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।

মামলার এজাহারনামীয় এই পাঁচ আসামি হলেন- সোহাগ শেখ, সেলিম শেখ, জুয়েল শেখ, লুৎফর শেখ ও আবদুল্লাহ মোল্লা। ১৮ মে ভার্চুয়াল আদালত তাদের নিয়মিত আদালত খোলা হওয়া পর্যন্ত জামিন দেয়। এ ঘটনায় এজাহারনামীয় ৩২ আসামির মধ্যে পাঁচজন হাই কোর্টে জামিন আবেদন করেন।

মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার পরবিলার টিপু শেখকে অতর্কিত হামলা করে খুন করা হয়। পরে তার ছেলে আলমগীর শেখ বাদী হয়ে দিঘলিয়া থানায় মামলা করেন। আলমগীর শেখের এজাহার অনুসারে জানা যায়, ৬ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৫টায় খুলনার দিঘলিয়া থানার পরবিলার টিপু শেখকে গাজীর হাট বাজারের পাশে কাঁঠালতলা ভ্যানস্ট্যান্ডে দিনের বেলায় ৩২ আসামিসহ অজ্ঞাতনামা অজ্ঞাত ৮-১০ জন অতর্কিত হামলা করে। আসামিরা বাদীর বাবার মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে উল্লাস করে চলে যান। পরে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেলে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক টিপু শেখকে মৃত বলে ঘোষণা দেন। মামলার নথি বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, মামলাটিতে ২১ ডিসেম্বর দিঘলিয়া থানা পুলিশ বিচারিক আদালতে চার্জশিট দাখিল করলেও হাই কোর্টে আসামিদের জামিন আবেদনে বলা হয়েছে, মামলা এখনো তদন্তনাধীন। এ ছাড়া জামিন আবেদনকারী আসামিরা গ্রেফতার হওয়ার পর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় নিজেদের দোষ স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। এ তথ্যও জামিন আবেদনে গোপন করা হয়েছে।

বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, আসল এজাহারে একটি স্থানে লেখা আছে ‘উক্ত হুকুম পাওয়া মাত্র ৫ নং আসামি লুৎফর শেখ তার হাতে থাকা রাম দা দিয়া আমার পিতার মাথার পেছনে কোপ মারে, যাতে গুরুত্বর জখম হয়।’ আর জামিন আবেদনের সঙ্গে দাখিল করা সৃজিত এজাহারে এই স্থানে ৫ নং আসামি লুৎফর শেখের পরিবর্তে ৯ নং আসামি মিরাজ শেখের ওপর দায় চাপানো হয়েছে। সৃজিত এজাহারে জামিনপ্রাপ্ত সব আসামির ক্ষেত্রেই দায় বদল করে দেওয়া হয়েছে বলে নথি বিশ্লেষণে দেখা গেছে। জানতে চাইলে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ড. মো. বশির উল্লাহ বলেন, ‘জামিন শুনানির সময় নথি যাচাইয়ের কোনো সুযোগ আমাদের থাকে না। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি আদালতকে অবহিত করেছি। হাই কোর্ট ওই পাঁচ আসামির জামিন বাতিল করেছেন। পাশাপাশি আসামিরা কারাগার থেকে বের হয়ে থাকলে সাত দিনের মধ্যে তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এই সময়ে আত্মসমর্পণ না করলে তাদের দ্রুত গ্রেফতারে ব্যবস্থা নিতে খুলনার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, আদালত আসামিপক্ষের আইনজীবীকেও শোকজ করেছেন। এ ছাড়া আপাতত ওই আইনজীবী আর ভার্চুয়াল আদালতে মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না বলে আদালত আদেশ দিয়েছে। জানতে চাইলে বাদীপক্ষের আইনজীবী বি এম সুলতান মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আসামিরা জামিন পাওয়ার পরপরই কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন। এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর