বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

তিন কারণে বাড়ছে সংক্রমণ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দেশে প্রতিদিন করোনাভাইরাস সংক্রমণে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। স্বাস্থ্য বিভাগের বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা, অসচেতনতা ও স্বাস্থ্যসেবার দুর্বলতাকে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার কারণ হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দুর্বলতাকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, লকডাউন পালনে মানুষের অনীহা করোনা মহামারীকে ছড়াতে সহযোগিতা করেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানা, শারীরিক দূরত্ব না মানা আক্রান্ত বাড়ার মূল কারণ। ঈদে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা রোগীরা। রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় আনতে হবে। আমরা উল্টোপথে হাঁটছি। এজন্য প্রতিদিন করোনা কেড়ে নিচ্ছে মানুষের জীবন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪ হাজার ৮৬৫ জন, মারা গেছেন ১ হাজার ১২ জন। সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন ১৫ হাজার ৯০০ জন। ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেইফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিসের (এফডিএসআর) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন বলেন, লকডাউন শিথিল করার ফলে যদি কভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের হার বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসাসেবা দেবার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ থাকতে হবে। এ সময়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার প্রচুর সুযোগ থাকতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কতিপয় দেশের বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশে গত দুই মাস ধরে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষিত হলেও দেশব্যাপী পরিপূর্ণভাবে লকডাউন পালিত হয়নি। খন্ডিত লকডাউনের ফলে আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণে কাক্সিক্ষত ফলাফল পাইনি। যদি লকডাউনটি আমরা কঠোরভাবে পালন করতে পারতাম, তাহলে অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও হয়তো করোনা সংক্রমণের হার আজ কমতির দিকে থাকত। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থায় আগে জীবনের কথাই ভাবতে হবে, জীবিকা নয়। জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় তাই সিদ্ধান্তগুলো অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এর ফলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর যে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হবে, সেটা সামাল দেওয়ার মতো অবস্থা স্বাস্থ্য খাতের আছে কি-না সেটাও দেখার বিষয়। মানবদেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করার জন্য পর্যাপ্ত টেস্টের ব্যবস্থা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। অথচ এ সময়ে প্রচুর টেস্টের সুযোগ নিশ্চিত করার দরকার ছিল। গণহারে টেস্ট করার জন্য এ সময়ে অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি কম্বো টেস্ট কিট ব্যবহার করা যেতে পারে। মহামারীর এতদিন পরও কিন্তু এখনো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে সমন্বয়হীনতা ও দক্ষতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে জটিলতর করে তুলছে। জনস্বাস্থ্যবিদ এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সংক্রমণ বাড়লে দেশে লকডাউন আরও জোরদার করতে হয়। আমাদের লকডাউন তুলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা থাকলে মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, যারা আগে থেকে অন্য জটিল রোগে ভুগছেন তাদের জন্য করোনা মৃত্যুদূত হিসেবে হাজির হয়েছে। কিন্তু রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া কিংবা ভেন্টিলেশনে রাখার মতো পর্যাপ্ত সুবিধা আমাদের হাসপাতালগুলোতে নেই। এতে করে করোনা রোগীর অবস্থার অবনতি হলে অক্সিজেনের সাপ্লাই বাড়িয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বাড়ছে রোগী মৃত্যুর ঘটনা। স্বাস্থ্যসেবায় সমন্বয় না থাকলে করোনা মহামারীকে থামানো কঠিন হয়ে পড়বে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর