শুক্রবার, ১২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

লাল শাপলায় সেজেছে আশুড়ার বিল

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

লাল শাপলায় সেজেছে আশুড়ার বিল

করোনাভাইরাসে বন্ধ বিনোদন কেন্দ্রগুলো। মানুষের নেই কোলাহল, আড্ডা। নিরিবিলি আশুড়ার বিলকে প্রাকৃতিক সাজে সাজিয়েছে প্রকৃতি। তাই করোনার এই সময়ে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের আশুড়ার বিল ও বনের অপরূপ সৌন্দর্য মুগ্ধকর পরিবেশে কাঠের সেতুটি যেন বন ও বিলকে একই সুতোয় গেঁথেছে। আশুড়ার বিলের ওপর কাঠের দৃষ্টিনন্দন সেতুটি পর্যটকদের কাছে যেমন আকর্ষণ, তেমনি বিলের দুই পারের মানুষের যাতায়াতে একমাত্র মাধ্যম। পূর্বে হরিপুর বাজার ও পশ্চিমে রতনপুর বাজারে কেনাকাটা করতে সেতুর ওপর দিয়ে যোগাযোগ সুবিধায় এলাকাবাসী খুশি। বিলের বিশুদ্ধ পানি, মুক্ত বাতাস, চারপাশে সবুজ ঘন অরণ্য, পাখিদের কিচিরমিচির ডাকাডাকি, বিলের ওপর ঝাঁকে ঝাঁকে বিচিত্র পাখির ওড়াউড়ির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের অন্তরে অন্য রকম শিহরণ জাগিয়ে তোলে। আষাঢ়-শ্রাবণের দিনে লাল-সাদা শাপলা ফুল ফুটিয়ে তোলে বিলের স্বপ্নিল রূপ। এ ছাড়া অতিথি পাখিদের আগমনে মুখরিত হয় বিলের পরিবেশ। করোনায় বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় আশুড়ার বিলের সঙ্গে জাতীয় উদ্যানে নেই প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড়। তাই পাখিদের অবাধ বিচরণ দেখা যাচ্ছে। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সরকার-ঘোষিত জাতীয় উদ্যানের শালবনের কোল ঘেঁষে এ বিলের অবস্থান। আশুড়ার বিলের নবাবগঞ্জ ও বিরামপুরের এলাকা নিয়ে আয়তন ৩১৯ হেক্টর। এর মধ্যে নবাবগঞ্জে ২৫১ হেক্টর অবস্থিত। এই বনে শাল ছাড়াও সেগুন, গামারি, কড়াই, বেত, বাঁশ, জামসহ প্রায় ২০ থেকে ৩০ প্রজাতির গাছগাছড়া রয়েছে। উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এ বিলটি লম্বায় পাঁচ কিলোমিটার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই আশুড়ার বিল নিয়ে রয়েছে নানা পৌরাণিক কাহিনি। অতি প্রাচীনকালে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে লড়াই চলছিল আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। সেখানে দেবতাদের কাছে অসুরেরা পরাজিত হয়েছিল। দেবতাদের খঞ্জরের আঘাতে অসুরদের ঝরা রক্ত তাদেরই পায়ে দেবে যাওয়া গর্তে ভরে গিয়েছিল বলে অসুরের বা আশুড়ার বিল নামকরণ করা হয়। অনেকে বলেন, ওই বিলের চারপাশ থেকে ৮০টি দ্বার বা নালা চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেছে বলে আশিনালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। বিশাল ওই বিলের গভীরতা ও কাদার তলানি এবং চারপাশ-বেষ্টিত শালবন একসময় নানা কিংবদন্তির জন্ম দেয়। বিলের মধ্যে কতিপয় স্থানের চমৎকার নাম আছে, যেমন পাতিলদহ, বুড়িদহ, কাজলাদহ, পীরদহ, মুনির আইল, মুনির থান ইত্যাদি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বিশাল আয়তনের এ বিলে সারা বছর পানি ধারণের জন্য গত বছর ক্রস ড্যাম নির্মাণ করা হয়। আবার নবাবগঞ্জ এলাকায় মুনির থানঘাট থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ১২ লাখ টাকা খরচ করে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের সুবিধার্থে শাল কাঠ দিয়ে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ ৯০০ মিটার জেড আকৃতির দৃষ্টিনন্দন আঁকাবাঁকা কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয় এবং নামকরণ করা হয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব কাঠের সেতু। এই কাঠের সেতুর পশ্চিমে খটখটিয়া কৃষ্ণপুর ও পূর্বে নবাবগঞ্জ এলাকায়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বন্ধ বিনোদন কেন্দ্রে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা না থাকায় প্রকৃতি আপন মনে সেজেছে। অবশ্য ওই এলাকায় যাতে কেউ না যেতে পারে সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

সর্বশেষ খবর