শুক্রবার, ১২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু দুই লাখ ছাড়ানোর শঙ্কা

ভবিষ্যতে আরও মহামারী দেখতে হবে বিশ্ববাসীকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু দুই লাখ ছাড়ানোর শঙ্কা

আগামী সেপ্টেম্বরের কোনো এক সময়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ২ লাখে পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন দেশটির শীর্ষ এক মহামারী বিশেষজ্ঞ। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আরোপিত সরকারি বিধিনিষেধ শিথিল করার পর বুধবার আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন মহামারী বিশেষজ্ঞ ও হার্ভার্ড গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের প্রধান আশিষ ঝা সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। তিনি বলেন, আমাদের যদি সংক্রমণ বৃদ্ধি না পায়, এটাকে যদি আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি; তারপরও এটা প্রত্যাশা করার যৌক্তিক কারণ আছে যে, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের যে কোনো সময়ে মৃতের সংখ্যা ২ লাখ স্পর্শ করবে। এটা ঠিক সেপ্টেম্বরের মধ্যেই হয়ে যাবে। কিন্তু মহামারী

সেপ্টেম্বরে ফুরিয়ে যাবে না।  ঝা বলেন, সামনের সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে আমরা কোথায় গিয়ে পৌঁছাব সেটা ভেবেই আমি উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। এ ছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৬৬ হাজার ৫০৮ জন। করোনা আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যায় এই মুহূর্তে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ায় আক্রান্ত ৫ লাখ ছাড়াল :  ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভাইরাসটির প্রকোপ অনেক পরে শুরু হলেও বিশ্বের শীর্ষ আক্রান্ত দেশগুলোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা রাশিয়ার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে দেশটির সরকারি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাতে জানানো হয়েছে, রাশিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৮ হাজার ৭৭৯ জন কভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ২ হাজারের বেশি। এ ছাড়া আরও ১৭৪ জন করোনায় আক্রান্ত মানুষ মারা গেছে রাশিয়ায়। দেশটিতে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা এখন ৬ হাজার ৫৩২ জন। ইউরোপে অন্যান্য দেশের তুলনায় রাশিয়ায় অবশ্য আক্রান্তের চেয়ে মৃত্যুহার অনেকটা কম। তবে সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে থাকায় তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশাস্তিনসহ দেশটির তিনজন মন্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশাস্তিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া দেশটির সংস্কৃতিমন্ত্রী ও আবাসনমন্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত। এদিকে সম্প্রতি আক্রান্ত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। গণহারে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা কর্মসূচির অধীনে মস্কো হাজার হাজার নাগরিককে যথেচ্ছভাবে করোনাভাইরাস অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা শুরু করেছে। এদিকে এই সংক্রমণ উদ্বেগের মধ্যে রাজধানী মস্কোর লকডাউন বিধিনিষেধ শিথিল করেছে কর্তৃপক্ষ। ভারতে ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৭ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত প্রায় ১০ হাজার : ভারতে এক দিনে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অন্তত ৩৫৭ জন এবং সংক্রমিত হয়েছেন ৯ হাজার ৯৯৬ জন। যা এখন পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে এক দিনে করোনায় সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড। এ নিয়ে ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৮০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। দেশটিতে টানা গত ৯ দিন ধরে ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজারের বেশি করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ভারতের অবস্থান এখন পঞ্চম। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভারতে করোনায় মারা গেছেন ৮ হাজার ১০২ জন। তবে মৃতদের অধিকাংশই দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় মহারাষ্ট্র প্রদেশের বাসিন্দা। মহারাষ্ট্রে করোনায় মারা গেছেন ৩ হাজার ৪৮৩ জন। দেশটিতে করোনাভাইরাসের হটস্পটে পরিণত হয়েছে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত মুম্বাই। বুধবার করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় এই ভাইরাসটির উৎস চীনের হুবেই প্রদেশের উহানকে ছাড়িয়ে গেছে মহারাষ্ট্র। ভারতে তৃতীয় সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে রাজধানী নয়াদিল্লিতে।

পাকিস্তানে আক্রান্ত ১ লাখ ২০ হাজার : পাকিস্তানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১ লাখ ২০ হাজার ছুঁই ছুঁই। বিশ্বের শীর্ষ আক্রান্ত দেশগুলোর তালিকায় দেশটির অবস্থান এখন ১৫তম। পাকিস্তানে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার লকডাউন ব্যবস্থা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরই মধ্যে দেশটির প্রথম সারির একজন রাজনীতিবিদ করোনায় আক্রান্ত হলেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই ও দেশটির বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রধান শেহবাজ শরিফ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। পাকিস্তানে মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা ও শীর্ষ রাজনীতিবিদদের আক্রান্তের তালিকায় সর্বশেষ তার নাম যুক্ত হলো।

ভবিষ্যতে আরও মহামারী দেখতে হবে বিশ্ববাসীকে : বিজ্ঞানীরা মনে করেন করোনাভাইরাসের মতো মহামারী ভবিষ্যতে আরও দেখতে হবে বিশ্ববাসীকে। যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে এটি ভবিষ্যতের কোনো রোগ বিস্তারের জন্য প্রস্তুত থাকার যে বৈশ্বিক প্রয়াস, তার অংশ। লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাথিউ বেলিস বলেন, গেল ২০ বছরে আমরা ছয়টি বড় বড় হুমকির সম্মুখীন হয়েছি সার্স, মার্স, ইবোলা, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, এবং সোয়াইন ফ্লু। পাঁচটি বুলেট এড়াতে পারলেও, ছয় নম্বরটার হাত থেকে বাঁচতে পারিনি। অধ্যাপক ম্যাথিউ বেলিস জানিয়েছেন, এটাই শেষ নয়। এমন মহামারী আরও আসবে। তাদের দাবি, এই সভ্যতায় বন্যপ্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে রোগ সংক্রমণ হয়ে তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়া তৈরি হয়েছে। যার কারণ প্রাকৃতিক জগতে মানুষের অনুপ্রবেশ। দীর্ঘদিন ধরে কোথায় এবং কীভাবে নতুন রোগের বিস্তার ঘটেছে- এমন গবেষণাকারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য দিয়েছেন। এক প্রতিবেদনে বিবিসি বলছে, বিজ্ঞানীরা একটি পদ্ধতি তৈরি করেছেন যাতে এসব রোগ বিস্তারে প্রক্রিয়ায় কী কী সাদৃশ্য দেখা যায় তা চিহ্নিত করা সম্ভব, যাকে বলে ‘প্যাটার্ন রিকগনিশন’। এই পদ্ধতির ফলে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব যে কোন কোন বন্যপ্রাণী মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

 

সর্বশেষ খবর