শুক্রবার, ১২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বাড়ছেই উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১৫ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল আরও ২৬ জন মারা গেছেন। সব মিলে গতকাল ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে দুজন, কুমিল্লায় সাতজন, জামালপুরে একজন, চাঁদপুরে সাতজন, পটুয়াখালীতে একজন, গাইবান্ধায় একজন, বগুড়ায় তিনজন, সিলেটে দুজন, বরিশালে একজন ও মাদারীপুরে একজন মারা গেছেন। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেকই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলে ১৫ জনের মৃত্যু : ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে করোনা সন্দেহ ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১৫ জন। এর মধ্যে পাঁচজনের করোনা পজেটিভ ছিল। বুধবার বিকাল থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় তারা মারা গেছেন। মৃত্যু ব্যক্তিরা হলেন,  মাহমুদা বেগম (৬০), আবদুল লতিফ (৬৫), আবদুল নুর (৫৩), বোরহান (৬৫), নুরুন নবী (৫৮), আবদুল বাতেন (৭৫), সাবরিনা (৭০), গোলাম (৫৮), দারিন (৪৫), আবদুস সামাদ (৫৬), আশরাফ (৭০), সফুরা (৬০), জাকিয়া (৩২), আতিকুর রহমান (৪৬) ও হরিবালা (৬৫)।

জেলায় জেলায় ২৬ মৃত্যু : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী- হাসপাতালে ফোন করে নিশ্চয়তা পাওয়ার পর রোগীকে নিয়ে যান স্বজনরা। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছে দেখেন অন্য চিত্র। জরুরি বিভাগে ঢোকার সুযোগও হয়নি রোগীর। এগিয়ে আসেননি কোনো চিকিৎসকও। হাসপাতালের পার্কিংয়ে অটোরিকশায় বসে থাকা রোগীর অক্সিজেনের মাত্রা মেপে দেখেন এক ওয়ার্ডবয়। এরপর শয্যা খালি নেই জানিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয় রোগীকে। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে অটোরিকশাতেই নিস্তেজ পড়েন মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী নামের ওই রোগী। গত দুই দিনে জসিম উদ্দীনসহ চারজন চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের এক যুবক (৩৩) মারা গেছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশস ডিজিজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাত ৯টার দিকে তিনি মারা যান। কুমিল্লায় একদিনে করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে সাংবাদিক, ওষুধ ব্যবসায়ীসহ নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন করোনা পজিটিভ। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সাজেদা বেগম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন করোনা পজিটিভ নারী মারা গেছেন। একই হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও তিনজন মহিলা ও তিনজন পুরুষ মারা গেছেন। এ দিকে কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য লিটন সরকার জানান, চান্দিনার ব্যবসায়ী কিংকর সাহা ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন। তাকে গ্রামের বাড়িতে দাহ করেন উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১০১ সদস্যের টিম। এ ছাড়া চান্দিনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা নামের একজন সাংবাদিক এলাকায় উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তাকেও তারা দাফন করেন। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ফেরত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। দুই ছেলে নিয়ে জামালপুরে ফেরার পরদিন গতকাল দুপুরে উপজেলার চর বাহাদুরাবাদ গ্রামের নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। মৃত কোহিনূর বেগম (৪১) দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের চর বাহাদুরাবাদ গ্রামের আবদুল মিয়ার স্ত্রী। করোনা উপসর্গ নিয়ে চাঁদপুরে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন-কচুয়া উপজেলার ৪নং পালাখাল মডেল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য জিএম আশর্^াদ (৭৫)। বুধবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি মো. আবদুর রহিম (৫৯)। বুধবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য, মতলব উত্তর উপজেলা ৯নং জহিরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আক্কাস বাদল (৪৯)। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গতকাল ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা যান তিনি। চাঁদপুর শহরের আল আমীন একাডেমির সাবেক শিক্ষক বেলায়েত হোসেন (৭৮)। তিনি ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোরে মারা যান। তিনি বেশ কিছুদিন ফুসফুসজনিত শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এ ছাড়া উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা পাটওয়ারী বাড়ির ডা. মিলন পাটওয়ারী (৬৫) বুধবার দুপুরে নিজ বাড়িতে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন হার্টের রোগী ও দুর্বলতায় ভুগছিলেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের মৌলভী বাড়ির আহসান উল্যাহ (৫০) গতকাল ভোরে ঢাকায় মারা যান। করোনা উপসর্গ জ¦র, কাশি নিয়ে সপ্তাহ খানেক যাবৎ তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। শহরের স্ট্রান্ড রোডস্থ খ্রিস্টান পাড়ায় নিরেন্দ্র বর্মণ (৫৫) মারা যান। তিনি বেশ কিছুদিন করোনার বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ ছিলেন। করোনা উপসর্গ জ¦র-কাশি নিয়ে পটুয়াখালীতে মো. হানিফ আকন (৫৩) নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোরে শহরের হেতালিয়া বাঁধঘাট এলাকার তার নিজ বাসায় অসুস্থাবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি রূপালী ব্যাংক নিউটাউন শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি গত কয়েকদিন যাবৎ জ¦র-কাশিতে আক্রান্ত ছিলেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে এক মুক্তিযোদ্ধার (৭৩) মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল সকালে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরের নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। বিকেলে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে উপজেলা সরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয়। পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদার রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্থানীয় সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকালে পলাশবাড়ী উপজেলা সরকারি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। বগুড়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তাসহ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল পৌনে ৮টা থেকে বেলা দেড়টার মধ্যে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশনে তাদের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে একজন সোনালী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা (৬৮)। শিবগঞ্জ পৌর শহরের এই বাসিন্দা জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। অপরজন বগুড়ার বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক (৩৭)। শ্বাসকষ্ট, জ্বরসহ বিভিন্ন সমস্যা ছিল তার। মারা যাওয়া তৃতীয় জন হলেন নারী (৩৭)। তারও করোনাভাইরাসের উপসর্গ ছিল। সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা নিয়ে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নারী (৫০) ও এক বৃদ্ধের (৯৫) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে মারা যাওয়া ওই নারী হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে এবং বৃদ্ধ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। এসব তথ্য জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক জন্মেজয় দত্ত।

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় বুধবার রাতে জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে এক কিশোরের (১৭) মৃত্যু হয়েছে। পরে তার নমুনা সংগ্রহ করে বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাশ দাফন করা হয়। ঘটনার পর ওই এলাকা লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। স্থানীয় লোকজন ও মৃতের স্বজনরা বলেন, ওই কিশোর গত কয়েক দিন ধরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছিল।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে এক সেলুন ব্যবসায়ীর (৬০) মৃত্যু হয়েছে। জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি ১০ দিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এ নিয়ে গত সাত দিনে মাদারীপুরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন পাঁচজন।

সর্বশেষ খবর