শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চ্যালেঞ্জিং বাজেট

---- ড. নাজনীন আহমেদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চ্যালেঞ্জিং বাজেট

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেছেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেট চ্যালেঞ্জপূর্ণ সময় মোকাবিলায় চ্যালেঞ্জিং একটি বাজেট হয়েছে। এই বাজেটে কভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলার বিভিন্ন উপায়ের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়ালেই চলবে না, এই খাতের ব্যয়ের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এই খাতের সুশাসন নিয়েও প্রশ্ন আছে। সেই জায়গাগুলো চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে রাজস্ব আদায় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয়ের যে চ্যালেঞ্জ, সেটা রয়েই গেছে। তবে চ্যালেঞ্জগুলো ওভারকাম করা গেলে এই বাজেট দিয়ে অর্থনীতির হাল বা উন্নয়নের যে গতিধারা সেটার ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বাজেট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি কথাগুলো বলেন। ড. নাজনীন বলেন, আশা ছিল এই বাজেট যেন অর্থনীতির হালটা ধরে রাখতে পারে। উন্নয়নের ধারা যেন ব্যাহত না হয়। সেই দিক থেকে ঘোষিত বাজেট চ্যালেঞ্জপূর্ণ সময় মোকাবিলায় চ্যালেঞ্জিং একটি বাজেট হয়েছে। এই বাজেটের ইতিবাচক দিক হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত, সামাজিক সুরক্ষা খাত, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে বেশকিছু পদক্ষেপ রয়েছে। একই সঙ্গে রাজস্ব আদায় ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয়ের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে আশা প্রকাশ করা হয়েছে এই পরিস্থিতিতে সেটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এই বছর প্রবৃদ্ধির চেয়ে মানুষের নজর জীবনযাত্রা ও কর্মসংস্থান কতটা টিকে থাকবে সেদিকে। সেই দিক থেকে মোবাইল ব্যবহারের ওপর অতিরিক্ত করারোপ ঠিক হয়নি। এটা আরও কমানো দরকার ছিল। এই সময়ে মোবাইল এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার যাতে সহজলভ্য হয় সেই জায়গাতে চেষ্টা করা উচিত। এটা বাজেটের একটি দুর্বলতা। সঞ্চয়ের ওপর যে অতিরিক্ত কর সেটা মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে চাপ বাড়াবে। তিনি বলেন, বাজেটে বারবার সুশাসন এবং কভিড মোকাবিলার প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে। এটা ইতিবাচক দিক। একই সঙ্গে দুর্বলতা হচ্ছে সুশাসনের কথা থাকলেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। আবার কভিড মোকাবিলার প্রত্যাশার কথা থাকলেও কভিডের রিস্ক বা অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় কোন পরিস্থিতিতে বাজেটের বরাদ্দ কীভাবে যাবে সেই জায়গায় একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলে ভালো হতো। কর্মসংস্থানের জন্য বাজেটে অনেক কথা বলা হয়েছে। তবে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং এই মুহূর্তে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন কাজের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটা কীভাবে গ্রহণ করা যাবে, প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেই সুযোগের ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ ও দিকনির্দেশনা থাকলে ভালো হতো। গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ১০০ কোটি টাকার একটা বরাদ্দ আছে। এই বরাদ্দ আরও বেশি থাকা দরকার এবং চলমান ১০০ দিনের কর্মসূচির আওতাও বাড়ানো উচিত। সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটটি চ্যালেঞ্জিং অবস্থার মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ নিয়েই সূচিত হয়েছে। আমি আশাবাদী বাজেটের দর্শনে সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং মানুষ ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য যে প্রতিজ্ঞাগুলো করা হয়েছে সেগুলো ঠিকভাবে পালন করা হবে।

সর্বশেষ খবর