শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

শুরু হচ্ছে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম

চলছে নথি স্থানান্তরের কাজ

আরাফাত মুন্না

নিয়মিত আদালত খোলার সঙ্গে সঙ্গে দেশের সাত বিভাগীয় শহরে স্থাপন করা মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে মানব পাচার দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার নথিপত্র স্থানান্তরের কাজ চলছে। আইন মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এতদিন মানব পাচার অপরাধ দমন আইনে দায়ের করা মামলাগুলোর বিচার হতো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। মানব পাচার অপরাধের দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে গত ৮ মার্চ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগীয় শহরে একটি করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন গঠন করা মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ দেওয়ার পর বিচারকরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এর পর পরই করোনাভাইরাসের কারণে সব আদালত বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু করার গতি কমে যায়। তিনি বলেন, বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার নথি স্থানান্তরের কাজ চলছে। আমরা খুব শিগগিরই এখানে লোকবল দিয়ে দেব এবং তারা কাজ শুরু করবেন।

এর আগে সাতটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য বিচারসহ ৩৫টি পদ সৃজন করা হয়েছে। আইন প্রণয়নের প্রায় আট বছর পর আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে এ ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালে ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের’ ২১ (১) ধারায় এ ধরনের ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের কথা বলা আছে। আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে মামলার বিচার শেষের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। জানা গেছে, এখন সারা দেশে মানব পাচারের ঘটনায় দায়ের করা প্রায় ছয় হাজার মামলা বিচারাধীন। মামলাগুলোর বিচারের ভার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ওপর রয়েছে। এসব ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার চাপ বেশি থাকায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে মানবপাচার মামলার বিচার। আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মানব পাচার প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হলে এই মামলাগুলো এখানে চলে আসবে। এতে উভয় ট্রাইব্যুনালে বিচারের গতি বাড়বে।

‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২’-এর ২১ ধারা অনুযায়ী এসব ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হচ্ছে। আইনের ২১(১) ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের অধীন অপরাধগুলো দ্রুত বিচারের উদ্দেশ্যে সরকার সরকারি গেজেট দ্বারা দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে যে কোনো জেলায় মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। ২১(২) ধারায় বলা হয়েছে, উপধারা (১) অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার প্রত্যেক জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে ওই জেলার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হিসেবে নিয়োগ ক্ষমতায়িত করতে পারবে। আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। আইনের এ-সংক্রান্ত ২৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন সংঘটিত কোনো অপরাধের অভিযোগ গঠনের ১৮০ (এক শত আশি) কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল বিচারকাজ সম্পন্ন করবে। ২৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, উপধারা (১)-এর বিধান সত্ত্বেও ওই সময়সীমার মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থতা বিচারকাজকে বাতিল করবে না, কিন্তু ট্রাইব্যুনাল ওই সময়ের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে সমর্থ না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে প্রতিবেদন পাঠাবে। এ আইনে সংঘবদ্ধভাবে মানব পাচারের জন্য মৃত্যুদ , যাবজ্জীবন কারাদ  ও সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদ  এবং অন্যূন পাঁচ লাখ টাকা অর্থদে র বিধান আছে।

সর্বশেষ খবর