শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

‘আইসিস বধূ’ শামীমা আইনি চ্যালেঞ্জ করায় বিরক্ত ব্রিটেন

যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি

আবারও ব্রিটিশ মিডিয়ায় সংবাদ হলেন আলোচিত ‘আইসিস বধূ’ শামীমা বেগম। লন্ডনের বহুল প্রচারিত ডেইলি মেইল-এর অনলাইন সংস্করণে বলা হয়, ১১ জুন বৃহস্পতিবার কোর্ট অব আপিলে শামীমা আইনজীবীর মাধ্যমে বলেছেন, ২০১৯ সালে তার নাগরিকত্ব যে ব্রিটিশ সরকার কেড়ে নিতে পেরেছিল তার কারণ সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি ন্যায্য ও কার্যকর আপিল করতে পারেন নি।

বাংলাদেশি বংশো™ভূত শামীমা বেগম মনে করেন, তার নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করা উচিত। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, শামীমার নিজের অন্যায়ের কারণে তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তার আইনি চ্যালেঞ্জ  মোকাবিলা করতে ব্রিটেনের সাধারণ মানুষের দেওয়া ট্যাক্সের ৩০ হাজার পাউন্ড খরচ করতে হয়েছে সরকারকে।

 ডেইলি মেইল জানায়, আদালতে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন স্যার জেমস ইদি কিউসি। তিনি সেখানে বলেছেন, শামীমা বেগম আপিলে পুরোপুরি অংশ নিতে না পারার কারণ, তিনি ব্রিটেন ছেড়ে গিয়ে আইএসে যোগ দেওয়ার  সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে এরই মধ্যে দেশের আয়কর দাতাদের দেওয়া অর্থের ১৪ হাজার ৫০০ পাউন্ড খরচ করিয়েছেন তিনি। এর সঙ্গে আদালতের সময় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টাফদের খরচ মিলে এই অংক আকাশচুম্বী। শামীমা বেগম আপিল করেন হাইকোর্ট এবং স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিলস কমিশনে (এসআইএসি)। এসআইএসি একটি বিশেষায়িত আদালত, যেখানে  কোনো ব্রিটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া চ্যালেঞ্জ করার ওপর শুনানি হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারিতে এসআইএসি রায় দেয় যে, শামীমা  বেগমের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া তিনি রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েননি এবং সরকারের এমন সিদ্ধান্ত আইনসম্মত। কারণ, তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। আদালত বলে তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ছিলেন ‘এ সিটিজেন অব বাংলাদেশ বাই ডিসেন্ট’। এই ট্রাইব্যুনাল আরও দেখতে পায় যে, আপিলে কোনো অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে পারছেন না শামীমা বেগম এবং তার প্রেক্ষিতে তার আবেদন ন্যায্য ও কার্যকর নয়। রায়ে বলা হয়, তার আপিল সফল হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে ব্রিটেনে ফিরতে দিতে অস্বীকৃতি জানানোর বিরুদ্ধেও চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন শামীমা  বেগম। তার সেই আপিলও প্রত্যাখ্যাত হয়। ১১ জুন তার এ মামলার ‘রিমোট’ শুনানি শুরুর সময়ে টম হিকম্যান কিউসি বলেছেন, শামীমার আপিলের মূল ইস্যুটি ছিল  যে, ন্যায্য ও কার্যকর উপায়ে চ্যালেঞ্জ জানানোর অনুপস্থিতি অন্যায়ভাবে তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে কিনা। ওদিকে স্যার জেমস বলেন, শামীমা তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন। আইনি পরামর্শ তিনি পেয়েছেন। ফলে তার সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করা হয়নি। শামীমা বেগমের বয়স এখন ২০ বছর। তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরও দু’বান্ধবী খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আব্বাসকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ব লন্ডনের বাসা থেকে সিরিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। তখন খাদিজার বয়স ছিল ১৬ আর আমিরার ১৫ বছর। তারা সিরিয়া গিয়ে যোগ দেন আইএসে। তিন বছরের বেশি সময় জঙ্গি সংগঠন আইসিস-এর সঙ্গে ছিলেন শামীমা। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে তাকে সিরিয়ার একটি আশ্রয়শিবিরে দেখা যায়। এ সময় তিনি ছিলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এর পরে ঘটনাপ্রবাহে এক পর্যায়ে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ ফেব্রুয়ারি মাসেই শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেন।

সর্বশেষ খবর