রবিবার, ১৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

উপসর্গ নিয়ে আরও ৩৩ জনের মৃত্যু

ঢাকা মেডিকেলে ১৩ মৃত্যু, বিভিন্ন জেলায় আরও ২০ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তিন দিনের শিশুসহ ১৩ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ২০জন মারা গেছেন। সব মিলে গতকাল ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে বগুড়ায় তিনজন, সিরাজগঞ্জে একজন, রাজশাহীতে দুজন, নরসিংদীতে একজন, পটুয়াখালীতে একজন, গোপালগঞ্জে একজন, চাঁদপুরে দুজন,  নোয়াখালীতে চারজন, মৌলভীবাজারে একজন, চট্টগ্রামে একজন, বরিশালে দুজন ও ময়মনসিংহে একজন মারা গেছেন। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলে ১৩ জনের মৃত্যু : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শুক্রবার বিকাল থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।  এদের মধ্যে  ৪জন করোনা পজিটিভ ছিল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যু ব্যক্তিরা হলেন, বেবী অব রোমানা (৩দিন), মো. আবুল হোসেন (৭৫), ইদ্রিস (৬০), আবু সরকার (৬০), নাসিমা বেগম (৪৭), কামাল উদ্দিন (৪৫), মো. আনোয়ার হোসেন (৫৫), সিরাজুল (৬০), মো. মোশারফ হোসেন (৬৫), প্রিয়া (২০), আনোয়ারা (২৮), আবদুল হাই (৫৩) ও শফিকুল ইসলাম (৬৫)। জেলায় জেলায় ২০ মৃত্যু : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী- বগুড়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে আরও ৩ জন। এরমধ্যে গতকাল সকালে মারা গেছেন শাকপালা মোড়ের ইমরান নাজির (৩৬)। উপসর্গ নিয়ে শুক্রবার রাত ৯টায় শিবগঞ্জ উপজেলার রহবলের মো. রাব্বি (৪৫) ও রাত ১০ টায় কলোনি এলাকার শামীম আহম্মেদ  ভুলু (৫৬) নামের এক ব্যক্তি মারা যায়। শামীম বগুড়া শহরের সাতমাথায় একটি ওষুধের দোকানের ম্যানেজার ছিল। সিরাজগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের বাড়ি উল্লাপাড়া উপজেলায় ও একজনের বাড়ি তাড়াশ উপজেলায়। গতকাল সকালে ও ভোরে নিজ নিজ বাড়িতে তারা মারা যান। করোনা উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন রোগী মারা গেছে। তারা করোনা ইউনিট ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃতরা হলেন, নওগাঁ সদরের সুপারিপট্টি এলাকার সিরাজ উদ্দিন (৫৫) ও বদলগাছী উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের আবদুল গাফফার (২০)।  নরসিংদীর মনোহরদীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে নান্নু মিয়া (৩৫) নামে এক দলিল লেখকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে মনোহরদী পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের নিজ বাড়িতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পটুয়াখালীর বাউফলে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া শিক্ষকের বয়স ৫০ বছর। তিনি বাউফলের পুনাহুরা সিনিয়র মাদ্রাসার আরবি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। বাড়ি উপজেলার কালিশুরী ইউনিয়নের কালিশুরী এস এ ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয় এলাকায়। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার স্বাস্থ্যকর্মী রিপন বৈদ্য (৪২) জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন। গতকাল সকালে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রিপন বৈদ্য মুকসুদপুরের জলিরপাড় ইউনিয়নের বানিয়ারচর গ্রামের পূর্ণ বৈদ্যের ছেলে। তিনি বানিয়ারচর ক্যাথলিক মিশনের চিকিৎসা কেন্দ্রের ল্যাব টেকনিশিয়ান ছিলেন। চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক পাটকল শ্রমিক (৬২) ও এক দোকানির (৫৩) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে নিজেদের বাড়িতে মারা যান তারা। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে (সঙ্গনিরোধ) থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন এক নারীসহ দুজন শ্বাসকষ্টের রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তাদের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া একই রাতে জেলার সদর উপজেলার একটি গ্রামে এবং বেগমগঞ্জের চৌমুহনী শহরে জ্বর, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত আরও দুই ব্যক্তি মারা গেছেন। জানা গেছে, জেনারেল হাসপাতালে মারা যাওয়া দুজনের একজন নারী। তার বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। তিনি জেলা শহরের সোনাপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। রাত ২টার দিকে তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় তাকে আইসোলেশন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পর তিনি সেখানে মারা যান। একই হাসপাতালে মারা যাওয়া অপর ব্যক্তির বাড়ি সদর উপজেলায়। তার বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর। তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে একই হাসপাতালে ভর্তি হন রাত ১১টার দিকে। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাত ২টার দিকে তাঁকে আইসোলেশন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে রাত আড়াইটার দিকে তিনি মারা যান। অন্যদিকে, শুক্রবার রাতে বেগমগঞ্জের চৌমুহনী শহরের এক বাসিন্দা জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে নিজ বাসায় মারা গেছেন। তার বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। একই রাত সাড়ে আটটার দিকে সদর উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নের নেয়ামতপুর গ্রামে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এক ব্যক্তি (৫৩) বাড়িতে মারা গেছেন। তিনি কবিরহাট উপজেলায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের এক তরুণ (২১) জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ওই তরুণ কয়েক দিন ধরে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক ব্যক্তি (৬৫) মারা গেছেন। শুক্রবার রাতে তিনি মারা যান। তার বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন। ময়মনসিংহে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক যুবকের (৩০) মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাতে ময়মনসিংহ শহরের এস কে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ২ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার আন্দারিয়া গ্রামের এক ব্যক্তির (৫০) মৃত্যু হয়। তার নমূনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৭ মিনিটে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নগরীর কাউনিয়ার এক ব্যক্তির (৬৫) মৃত্যু হয়। নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে (ধলু সরকার) গত শুক্রবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

সর্বশেষ খবর