সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

জল পাহাড়ের কাপ্তাই হ্রদ

আলম শাইন

জল পাহাড়ের কাপ্তাই হ্রদ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সুপেয় জলের বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলায়। যার আয়তন ৬৬৩ বর্গকিলোমিটার। এটি জেলাসদরসহ কাপ্তাই, লংগদু, নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে এ  হ্রদ  সৃষ্টি করা হয়। ১৯৫৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে তৎকালীন সরকার কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এবং ইউতাহ ইন্টারন্যাশনাল ইন কর্পোরেট প্রায় ২১৯৮.৩৫ফুট দীর্ঘ ও ১৭৯.৪৬ ফুট উচ্চতার এ বাঁধটি নির্মাণ করলে এটি ইংরেজি বর্ণমালার এইচ অক্ষরের রূপ ধারণ করে বিশাল আয়তনের হ্রদে পরিণত হয়। এই হ্রদের গড় গভীরতা ২৯.৫২ ফুট এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ১১৮.১১ ফুট। হ্রদের পাশে ১৬টি জলকপাট সংযুক্ত করে ৭৪৫ ফুট দীর্ঘ জল নির্গমন পথ রাখা হয়েছে। যে পথ দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লাখ ২৫ হাজার কিউসেক জল নির্গমন করতে সক্ষম। সেই শক্তি কাজে লাগিয়েই তৈরি হয় জলবিদ্যুৎ।

কাপ্তাই বাঁধের সুবাদে বিশাল আকৃতির হ্রদ সৃষ্টির সুফল ভোগ করছেন ওই অঞ্চলের অধিবাসীরা। রাঙামাটি জেলার পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে মূলত এই হ্রদ ঘিরে। মানুষের জীবনযাত্রার মান যেমন বেড়েছে তেমনি তৈরি হয়েছে যোগাযোগের সুব্যবস্থা। হ্রদ তৈরির পূর্বে রাঙামাটি সদর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে  যাতায়াতে সমস্ত দিন কেটে গেলেও বর্তমানে সেসব স্থানে মাত্র ঘণ্টা দুই-তিনেকের মধ্যে যাতায়াত সম্ভব। তা ছাড়াও হ্রদের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণে রাঙামাটি জেলায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে সারা বছর। যার ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও উপকৃত হচ্ছেন ব্যাপক। কাপ্তাই হ্রদের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে, বেলে পাথর দ্বারা গঠিত পাহড়সমূহ। যা জলতল থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়াও শত প্রজাতির গাছ-গাছালি, প্রাণীসম্পদ, জীববৈচিত্র্যের সমাহার পর্যটকদের টানছে প্রতিনিয়ত। এখানে রয়েছে নয়নাভিরাম একটি ঝুলন্ত সেতু। যা হ্রদের জৌলুস বাড়িয়ে দিয়েছে খানিকটা। অর্থনৈতিকভাবেও সমৃদ্ধ কাপ্তাই হ্রদ; মৎস্য উৎপাদনে রেকর্ড গড়েছে। বছরে প্রায় ৭ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয় এখানে। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জোগান দিতে সক্ষম হন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, হালে মাছের উৎপাদন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে হ্রদের জল দূষিত হওয়ার কারণে। সূত্রমতে, এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫ টনের অধিক মনুষ্যবিষ্ঠা ও অন্যান্য বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ফলে তা জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।-আলম শাইন

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর