সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব ছিল

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগুন নেভাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া অগ্নিকান্ড সংঘটন ও তা প্রতিরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

গতকাল তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাই কোর্টে দাখিল করা হয়। পরে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২২ জুন দিন ঠিক করে। ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও রাজউকের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে কর্মরত ব্যক্তিরা শীতাতপ যন্ত্র (এসি) থেকে ধোঁয়া দেখামাত্র প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা, ইমার্জেন্সি অ্যালার্ম বাজানো, রোগী অপসারণ ও হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ দলকে উপস্থিত হতে জরুরি অনুরোধ করলে এ ধরনের অগ্নিকান্ড ও রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো। এ ছাড়া এসি থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হতে দেখেও কর্মরত উপস্থিত ব্যক্তিদের (ডাক্তার, তিনজন নার্স ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী) আগুন নেভানোর ব্যাপারে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অন্যান্য আগুন নেভানোর সরঞ্জামাদি ব্যবহারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ফলে অগ্নিকান্ডের সময় আগুন নেভাতে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের গাফিলতির কারণে ঘটনাটি ঘটে বলে তদন্ত কমিটি মনে করে।

ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্নিকান্ডের সময় অগ্নিনিরাপত্তা অফিসার উপস্থিত ছিলেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেইফটি অফিসার ও অগ্নিনির্বাপণকারী দলের সদস্যদের উপস্থিত থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল। আইসোলেশন সেন্টারে সব প্রকারের অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করা দরকার ছিল। অস্থায়ী সরঞ্জামাদি দ্বারা তৈরি না করে স্থায়ী অথবা অগ্নি প্রতিরোধযোগ্য নির্মাণসামগ্রী দ্বারা এ ধরনের আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা উচিত ছিল বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

কমিটির সুপারিশ : ইউনাইটেড হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেইফটি অফিসার, কার্যকরী অগ্নিনির্বাপণকারী দলের সদস্যদের সরঞ্জামসহ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ ও ফায়ার অ্যান্ড ইভাকুয়েশন ড্রিল করা এবং যথাযথভাবে রেজিস্ট্রার রক্ষণাবেক্ষণ করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া হাসপাতালে কর্মরত সব ব্যক্তির মধ্য থেকে যারা রোগীর সঙ্গে অবস্থান করে তাদের ২৫ ভাগ জনবলকে অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ ছাড়া বিএনএসবির আলোকে ভবনের বেইজমেন্টে কোনো স্থাপনা যেমন অফিস, স্টোর, কিচেন, ডাইনিং ইত্যাদি স্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বেইজমেন্ট শুধু গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে বলে সুপারিশে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৭ মে রাতে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে আগুনে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে ছিলেন চারজন পুরুষ এবং একজন নারী।

সর্বশেষ খবর