সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ফিল্মি স্টাইলে পাঁচ মিনিটেই গার্মেন্টের ৮০ লাখ টাকা লুট

৫ জন আটক, নগদ ৩১ লাখ টাকা, ব্যবহৃত অস্ত্র ও গাড়ি উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ইনক্রেডিবল ফ্যাশনস লিমিটেড গার্মেন্টের মাইক্রোবাস থেকে ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা লুটের ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে র‌্যাব। মাত্র পাঁচ-১০ মিনিটের ফিল্মি স্টাইলের অপারেশনে অস্ত্রের মুখে এই বিপুল অর্থ লুট করে নেয় ডাকাত দলটি।

গতকাল ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারীসহ ওই পাঁচজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন রিয়াজ (৩৬), সাগর মাহমুদ (৪০), জলিল (৪০), ইসমাইল হোসেন মামুন (৪৫) ও মনোরঞ্জন মন্ডল বাবু (৪১)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৩০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, এক হাজার ১০০ মার্কিন ডলার, একটি প্রিমিও প্রাইভেটকার, তিনটি মোটরসাইকেল, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি বিদেশি পিস্তল, ২১ রাউন্ড গোলাবারুদ, দুটি ম্যাগাজিন, তিনটি পাসপোর্ট ও ৩৮টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।

আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, চার-পাঁচ মাস আগে চক্রটির মূল হোতা জলিলের পরিকল্পনায় ইসমাইল হোসেন ও মনোরঞ্জন মন্ডল দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ শেষে টার্গেট নির্ধারণ করেন। কারণ ইনক্রেডিবল গার্মেন্টের শ্রমিকদের বেতন ক্যাশে প্রদান করা হয় এবং ব্যাংক থেকে টাকা সংগ্রহের সময় কোনো অস্ত্রধারী নিরাপত্তাপ্রহরী থাকে না। আর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোরঞ্জন ওই গার্মেন্টে সাব-কন্ট্রাক্টের কর্মী হিসেবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আসা-যাওয়া শুরু করেন। এর আড়ালে তিনি গার্মেন্টের অন্যান্য কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী, পার্শ্ববর্তী দোকান ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে কৌশলে তথ্য সংগ্রহ করেন। তার তথ্যের ভিত্তিতেই ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তবে তাদের এপ্রিল ও মে মাসের ডাকাতির পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কারণ এপ্রিলের বেতন দেওয়া হয়েছিল মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এবং মে মাসের বেতনের টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল পুলিশ স্কটের মাধ্যমে। অবশেষে জুনের বেতন সংগ্রহের সময় পুলিশ স্কট থাকবে না নিশ্চিত হয়ে ৭ জুন ডাকাতির দিন নির্ধারণ করে তারা। ঘটনার ১২ থেকে ১৫ দিন আগে ইসমাইল, জলিল ও মনোরঞ্জন মাঠপর্যায়ে রেকি করে ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থান নির্বাচন করেন। ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন প্রথমে তিনটি মোটরসাইকেলে ছয়জন একটি সুবিধাজনক স্থানে মিলিত হয়। পেছনের আরোহীদের সবাই অস্ত্র বহন করেছিল। অন্যদিকে ছিনতাইয়ের টাকা বহনের জন্য একটি প্রাইভেটকার জামগড়া নামক স্থানে অপেক্ষা করছিল। গার্মেন্ট এলাকা থেকে ডাকাত দলটিকে প্রতি মুহূর্তের তথ্য সরবরাহ করছিলেন মনোরঞ্জন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টাকা উত্তোলনের জন্য গার্মেন্টের লোকজন মাইক্রোবাসে ব্যাংকের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন বলে মোবাইলে মূল হোতা জলিলকে জানান তিনি। এমন তথ্যের ভিত্তিতে সফিপুরে অপেক্ষমাণ তিনটি মোটরসাইকেল নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে মাইক্রোবাসটিকে অনুসরণ করতে থাকে। টাকা উত্তোলনের পর ফেরার পথে খাড়াজোড়া এলাকায় দুটি মোটরসাইকেল সামনে গিয়ে মাইক্রোবাসের গতি কমিয়ে দেয়। তৃতীয় মোটরসাইকেলটি মাইক্রোবাস থামিয়ে দিয়ে কৌশলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা লোহার হ্যামার দিয়ে মাইক্রোবাসের গ্লাস ভেঙে ফেলে এবং অতর্কিতে মাইক্রোবাসের সামনের গ্লাসে গুলি ছোড়ে। এতে একটি গুলিতে কারখানার সহকারী মার্চেন্ডার রাজীব মজুমদার গুরুতর জখম হন। পরে তারা মাইক্রোবাসে থাকা কারখানার লোকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোরপূর্বক টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মাত্র পাঁচ-১০ মিনিটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এলোপাতাড়ি গোলাগুলির ফলে দলের মূল হোতা জলিলের হাত গুলিতে বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তারা মোটরসাইকেলযোগে জামগড়া কাশিমপুর রোডে অপেক্ষমাণ প্রাইভেটকারের কাছে পৌঁছান। লুট করা টাকা নিয়ে গুলিবিদ্ধ জলিল, সাগর ও রিয়াজ ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। লে. কর্নেল সারওয়ার বলেন, তারা প্রথমে সবাই সাগরের খিলগাঁওয়ের বাসায় যান। সেখান থেকে জলিলকে মালিবাগের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আর পথে টাকাগুলো ভাগ করে নেয় তারা। অপারেশনে অংশগ্রহণভেদে সবাইকে পাঁচ লাখ থেকে আট লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া অস্ত্র বহন ও গুলি এবং প্রাইভেটকার প্রদান করার জন্য আলাদাভাবে টাকা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, মূলত আট-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট ডাকাতির ঘটনাটি ঘটিয়েছে। দলের মূল হোতা জলিলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত থাকায় গ্রেফতার এড়াতে তিনি ২০১৬ সালে প্রবাসে পাড়ি জমান। সাত-আট মাস আগে দেশে ফিরে আবারও ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। চক্রটি ডাকাতি, ছিনতাই ছাড়াও মাদক, চাঁদাবাজি ও পতিতাবৃত্তি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান লে. কর্নেল সারওয়ার। ডাকাতির ঘটনায় গার্মেন্টের কেউ জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তদন্তে গার্মেন্টের কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। ৭ জুন গাজীপুরের কালিয়াকৈর সুরিচালা এলাকার ইনক্রেডিবল ফ্যাশনস লিমিটেড গার্মেন্টের মাইক্রোবাস থেকে ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা লুট করে নেয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা।

সর্বশেষ খবর