শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাকালেও নানা কায়দায় আসছে মাদক

আমের ঝুড়িতে কুরিয়ার সার্ভিসে প্রেসার কুকারের ভিতরে

সাখাওয়াত কাওসার

একের পর এক অভিযান চালিয়েও থামানো যাচ্ছে না মাদক চোরাচালান। উপরন্তু করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নিত্যনতুন কৌশলে মাদক আনা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সর্বশেষ র‌্যাবের হাতে গত শনিবার ১৯ হাজার পিস ইয়াবাসহ তিন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে। সারাদেশে চলতি মাসে চালানো অভিযানে প্রায় এক লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া বিপুল হেরোইন, ফেনসিডিল ও কয়েক মণ গাঁজা উদ্ধার হয়েছে।  গ্রেফতার হয়েছে দুই শতাধিক। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে অন্তত ৬০ জনকে। র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে খোদ রাজধানী ঢাকাতেই দুই মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। অথচ থোড়াই কেয়ার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।

র‌্যাব-২ এর পুলিশ সুপার মুহম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীর নেতৃত্বে একটি দল গতকাল সকালে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড থেকে কুরিয়ার সার্ভিসে আমের ঝুড়ি ও প্রেশার কুকারের ভিতরে করে পাচার হয়ে আসা ৫০ লাখ টাকা মূল্যের আধা কেজি হেরোইনসহ হাবিবুর রহমান বাবু (২৯) ও দিলরুবা দিপা (২৭) নামে এক দম্পতিকে গ্রেফতার করে। তাদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের চাকপাড়ায়। র‌্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জানান, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে কুরিয়ার সার্ভিসে শিশুখাদ্য, মৌসুমি ফল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যাদি পাঠানোর আড়ালে হেরোইন পাচার করে আসছে। তারা শাড়ি ও লুঙ্গির ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কুরিয়ারে প্রতি মাসে ৩/৪টি করে চালান আসে, যাতে ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকার হেরোইন এসে থাকে। শনিবার রাতে র‌্যাব-৩ সাভারের আশুলিয়ার কুটুরিয়ার আলী আকবরের পাঁচতলা আঁখি ভিলা নামের বাড়ি থেকে ১৯ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে। গ্রেফতার করা হয় মাদক ব্যবসায়ী মো. মিজানুর  রহমান ওরফে আগামীকাল মিজান (৩২), মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক (৩০) ও মো. রইচ উদ্দিনকে (২৮)। তাদের মধ্যে প্রথম দুজনের বাড়ি চট্টগ্রামে। অপরজনের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. রাকিবুল হাসান জানান, মূলত তারা মাদক সিন্ডিকেট। এমন সিন্ডিকেটের অভাব নেই। সারা দেশে তারা সিন্ডিকেট করে সুবিধামতো মাদক পাচার করে। চলতি মাসে র‌্যাব-২ ধানমন্ডি থেকে কুরিয়ার সার্ভিসে করে ফুলের ঝুড়ির মধ্যে আসা ১৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক জনকে, নব্বই কেজি গাঁজা, ৫০০ পিস ইয়াবা, মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত পিকআপ ও অস্ত্রসহ এক মাদক কারবারি ঢাকার মিরপুর থেকে, কাঁঠাল বোঝাই করে সেই ট্রাকে আলাদা চেম্বার বানিয়ে ফেনসিডিলসহ একজনকে, প্রায় আড়াই শ গ্রাম হেরোইন ও হেরোইন বিক্রির প্রায় আড়াই লাখ নগদ টাকাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী দম্পতি ও ঊনত্রিশ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে। র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,  একের পর এক অভিযান চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক সাফল্য এসেছে র‌্যাবের ঝুড়িতে। তবে এটা সত্য যে চলমান করোনা পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে খোদ ঢাকাতেই বনানীর কড়াইল বস্তি এলাকায় ও আগারগাঁওয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে র‌্যাবের গোলাগুলিতে একজন করে দুই কুখ্যাত মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। মাদকের আগ্রাসন বন্ধে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। ডিআইজি মাসুম রাব্বানী বলেন, সত্যিই মাদক নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। শুধু আমরা নই, পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রই মাদকের ভয়াল থাবার কারণে মারাত্মকভাবে উদ্বিগ্ন।

সর্বশেষ খবর