মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে

--- ড. হোসেন জিল্লুর রহমান

অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, আমাদের উন্নয়নটাকে এখন মানুষের জীবন থেকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। এখন অগুরুত্বপূর্ণ বা কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নকে বাদ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা দেখা দিয়েছে। এখন আমরা এক ধরনের অবকাঠামো বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে চলেছি। কিন্তু আমরা তো কার্যকর অবকাঠামো তৈরি করতে পারছি না। যেমন এমন ভবন আছে কিন্তু সেটির কোনো ব্যবহার নেই। বড় বড় হাসাপাতাল আছে কিন্তু সেখানে কোনো স্বাস্থ্যসেবা নেই। এই যে এ ধরনের উন্নয়নগুলো, এসব নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। এখন যে পরিস্থিতি, সে বিবেচনায় আমাদের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যেও কিন্তু গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকার ব্যাসিস নির্ধারণ করতে পারতাম। অবশ্য সুযোগ যে একেবারেই চলে গেছে তা নয়। বাজেট যেহেতু এখনো পাস হয়নি ফলে এখনো সরকার চাইলে তা সংশোধন করতে পারে। মেগা প্রকল্পের সব কাজ চালু না রেখে বেশি গুরুত্বপূর্ণগুলো চালু রেখে বাকিগুলো স্থগিত করা যেতেই পারে। এতে বরং সুবিধাই হয়। অর্থের অপচয় হবে না। আবার কাজেরও সুবিধা হবে। যা অর্থনীতিতে একটা সচলতা আনবে। এর বাইরে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল বা অন্য যে মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সেটি তো মনে হয় না আগামী বছর কোনো কাজে আসবে। কেননা, এই কভিডের প্রভাব তো আর কালই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। ফলে ওই সব মেগা প্রকল্পের অনুকূলে যে বরাদ্দটা রাখা হয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্পে ব্যয় করার মাধ্যমে। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের আরও বড় সমস্যা হলো, এই যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ গেল। আম্ফান। সেটির জন্য আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হলো। এখনো ওই এলাকার মানুষ পানিবন্দী। এর কারণ হলো বাঁধটা ভেঙে যাওয়া। এখন বাঁধ বারবার কেন ভাঙছে সেটিই তো প্রশ্ন এবং সেটি দেখতে হবে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য ওই এলাকায় শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণের জন্য মেগা প্রকল্প নিতে হবে। সেটিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো বাজেটে যে লুকোচুরিগুলো রয়েছে, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। যেমন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে দেখানো হয়েছে শিক্ষা খাতের প্রকল্প হিসেবে। এটা কীভাবে হয়? এই চালাকি কার স্বার্থে? আবার পেনশনের জন্য যে বরাদ্দ, সেটি দেখানো হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে। এগুলো নিয়ে আরও ভাবতে হবে। অথচ আমরা স্বাস্থ্য খাতকে অবহেলা করছি। কিন্তু এটিকেই তো বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিল। মেগা প্রকল্প তো স্বাস্থ্য খাতেই নেওয়া প্রয়োজন। পাবলিক হেলথের বেলায় আবার সার্বিকভাবে ভাবা দরকার। অন্য যে মেগা প্রকল্পগুলো রয়েছে সেগুলোকেও অগ্রাধিকারের বিবেচনায় নিতে হবে। কোনটা জরুরি আর কোনটা জরুরি নয় সে তালিকা করতে হবে। এই ধরুন পদ্মা সেতুর কথা। এর কাজ তো চলছে। আবার মেট্রোরেলের কাজও চলছিল। কিন্তু এখন তা বন্ধ। এর বাইরে যেগুলো রয়েছে সেগুলোর কোনো কোনোটার তো কাজই শুরু হয়নি। সেসব প্রকল্পে এবার বরাদ্দ না রাখলেও চলত। বরং সে অর্থটা আমরা অন্য কোনো ভালো প্রকল্পে কাজে লাগাতে পারতাম। সে সুযোগ যদিও এখনো আমাদের রয়েছে। কিন্তু সেটি তো সরকারকেই আগে ভাবতে হবে।

সর্বশেষ খবর