মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ সংক্রমিত

করোনায় মারা গেলেন বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এখন ৪ লাখ ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও ৮০ লাখ ১৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, গড়ে প্রতিদিন বিশ্বে ১ লাখ করে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এদিকে এ রোগে মৃত্যুর তালিকায় এই প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছেন কোনো প্রেসিডেন্ট। তিনি হলেন বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট পিয়েরে এনকুরুনজিজা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথানুযায়ী, বর্তমানে ভারত এবং ব্রাজিলে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। তবে আক্রান্তের হিসাবে আমেরিকা এখনো প্রথম। এ দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ২১ লাখ ৬৩ হাজারে। মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার মানুষের। আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ব্রাজিল (৮ লাখ ৬৭ হাজার ৮৮২ জন), রাশিয়া (৫ লাখ ৩৭ হাজার ২১০ জন) এবং ভারত (৩ লাখ ৩৩ হাজার ২৫৫ জন)। এ ছাড়া চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি এবং স্পেনে চলতি বছরের শুরুতে পরিস্থিতি ভয়াবহ থাকলেও বর্তমানে এ দেশগুলোতে

সংক্রমণের হার কমেছে। অবশ্য চীনে বেইজিংয়ের বাজার থেকে নতুন করে ফের করোনা ছড়িয়েছে। জানা গেছে, সেখান থেকে লিয়াওনিংয়ের দিকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। নতুন করে সংক্রমণ ছড়িয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াতেও। আর তা মূলত পর্যটন, ডোর টু ডোর সেলস এবং নাইট ক্লাব থেকে ছড়িয়েছে।

আফ্রিকান দেশগুলোতেও করোনা সংক্রমণের হার এখন ঊর্ধ্বমুখী। আফ্রিকার রাষ্ট্রনেতারা জানিয়েছেন, প্রতি মাসে ৩ কোটি টেস্টিং কিট (৩০ মিলিয়ন) এবং ১০ হাজার ভেন্টিলেটর আফ্রিকার দেশগুলোতে চীন পাঠাবে বলে নিশ্চিত করেছে। এদিকে পাকিস্তানেও এক দিনে রেকর্ড সংক্রমণ হয়েছে। গত রবিবার ২৪ ঘণ্টায় সেদেশে ৬ হাজার ৮২৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৮০ জনের। পাকিস্তানে  মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩ হাজার।

বিশ্বে প্রথম প্রেসিডেন্টের মৃত্যু : করোনাভাইরাসের কারণে আফ্রিকার দেশ বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট পিয়েরে এনকুরুনজিজার মৃত্যু হয়েছে। দেশটির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগে শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন ৫৬ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট পিয়েরে। এ খবর অনুযায়ী, পিয়েরে হবেন বিশ্বের প্রথম ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট এনকুরুনজাজির স্ত্রীও গত মাসের শেষ দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কঙ্গোর প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা পিয়েরে লুম্বিও মারা গেছেন। লুম্বি ছিলেন কঙ্গোর বিরোধীদলীয় নেতা মার্টিন ফায়লুর প্রচারণা ব্যবস্থাপক।

মহামারী ফিরছে চীনে : করোনাভাইরাস মহামারীর প্রথম ধাক্কা সামাল দিলেও গত কয়েকদিনে চীনে আবারও বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণের হার। দ্বিতীয় পর্যায়ে অন্তত টানা তিন দিন নতুন রোগী শনাক্তের রেকর্ড গড়েছে দেশটি। গত রবিবার ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আরও অন্তত ৪৯ জনের শরীরে পাওয়া গেছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। গতকাল চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, নতুন শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ৩৬ জনই দেশটির রাজধানী বেইজিংয়ের। একটি পাইকারি খাদ্যপণ্যের বাজার থেকে শহরটিতে করোনা ছড়ানো শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধু বেইজিং নয়, সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে এর বাইরেও। করোনার উৎস হুবেই প্রদেশেও ২৪ ঘণ্টায় অন্তত তিনজন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় গতকাল বেইজিংসহ সংলগ্ন ১০টি জায়গায় নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনিক অফিসার লি জুনজি বলেছেন, উত্তর-পশ্চিম হাইডিয়ান ডিস্ট্রিক্টের একটা পাইকারি বাজারে নতুন করে সংক্রমণের খবর মিলেছিল। তারপরই ওই বাজার এবং লাগোয়া এলাকার স্কুলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের লকডাউন বিধি পালন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা কমেছে : যুক্তরাজ্যে গত কয়েক মাসের মধ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত রবিবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এমন তথ্য। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসে নতুন করে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২১ মার্চের পর থেকে এ পর্যন্ত এ সংখ্যা সর্বনিম্ন। রবিবারের পরিসংখ্যান মিলিয়ে যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪১ হাজার ৬৯৮। ইউরোপের কোনো দেশে এটিই করোনায় সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা।

করোনাজয়ী এশিয়ার ৩ দেশ : কয়েক মাস আগেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বড় একটা অংশে করোনা কঠোর আঘাত এনেছিল। এই ছড়িয়ে পড়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে ছিল থাইল্যান্ড। কিন্তু তারা করোনা জয় করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামও এই ভাইরাস মোকাবিলায় অন্যতম সফল দেশের তালিকায় নাম উঠিয়েছে। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাসটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে বিশেষত ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরে শক্ত আঘাত হানে। সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মৃত্যু ও বিপর্যয় দুটোই দেখা যায়। কর্তৃপক্ষ এখনো প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে লড়াই করে যাচ্ছে। তবে অবাক করা বিষয় হলো এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোয় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আশঙ্কা এড়ানো গেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ডে ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মালয়েশিয়া ১২০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। প্রশংসনীয় হয়েছে ভিয়েতনামের নেওয়া পদক্ষেপ। সেখানে এখন পর্যন্ত একজনেরও মৃত্যু হয়নি। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের অধ্যাপক ডেল ফিশার বলেন, এসব দেশের এই সাফল্যের মূল কারণ জনসচেতনতা। মানুষের জন্য পরিষ্কার একটি বার্তার প্রয়োজন ছিল, তা তারা দিতে পেরেছে। তিনি বলেন, ‘কোনো দেশে যদি দুর্বল নেতৃত্ব থাকে, তাহলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। কী করবে এবং কাকে বিশ্বাস করবে, এ নিয়ে তারা নিশ্চিত নয়। তাই অবজ্ঞার একটা মনোভাব চলে আসে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০২ সালে সার্স মহামারীর পর স্বাস্থ্য খাতকে দ্রুত কাজ করার বিষয়ে এশিয়ার অনেক দেশই সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই এ ধরনের মহামারী ঠেকাতে এবার তারা এমন অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পেরেছে। কম্বোডিয়ায় ২ হাজার ৯০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিজুড়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠেও নেমেছেন তারা। কম্বোডিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি (ডব্লিউএইচও) লি আইলান জানান, তারা দ্রুত শনাক্তকরণ এবং যোগাযোগ কার্যকর করেছেন। অন্যদিকে থাইল্যান্ড ১০ লাখের বেশি গ্রাম স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবী সম্প্রদায়গুলোর ওপর সর্বদা নজর রেখেছিল। আর ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই করোনা ঠেকানোর করণীয় নিয়ে আলোচনায় বসেছিল মালয়েশিয়ার সরকার। ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাগারগুলোয় প্রয়োজনীয় কিটের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া বড় আকারের প্রকোপ হলে হাসপাতাল পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।

ভারতে ‘পিক টাইম’ নভেম্বর :  বর্তমানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ভারতে করোনা সংক্রমণ। তবে দেশটিতে করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ সময় পিছিয়ে গেছে বেশ কয়েক সপ্তাহ। লকডাউনের কারণে সংক্রমণের পরিমাণ কমেছে, তাই ‘পিক টাইম’ বা সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময় পিছিয়েছে। আর সেই সর্বোচ্চ সংক্রমণ দেখা দিতে পারে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। তখন ঘাটতি দেখা দিতে পারে আইসিইউ-শয্যা ও ভেন্টিলেটরের। এমনটিই জানিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) গঠিত অপারেশনস রিসার্চ গ্রুপের গবেষণা। সমীক্ষা বলছে, লকডাউনের ফলেই ভারতে সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছাতে ৩৪ থেকে ৭৬ দিন দেরি হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গুছিয়ে নেওয়ার সময় মিলেছে। সংক্রমিতের সংখ্যা যা হওয়ার কথা ছিল, তার চেয়ে ৬৯% থেকে ৯৭% কম। বস্তুত, লকডাউনের পরে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও ৬০ শতাংশ জোরদার হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই গবেষণা। এর ফলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চিকিৎসা পরিকাঠামোয় ঘাটতি হবে না। কিন্তু তার পরেই ৫.৪ মাস ধরে আইসোলেশন শয্যার অভাব দেখা দিতে পারে, আইসিইউর শয্যার টানাটানি চলতে পারে ৪.৬ মাস এবং ভেন্টিলেটরের ঘাটতি থাকতে পারে ৩.৯ মাস ধরে। পরিকাঠামোর বর্তমান অবস্থার ওপর ভিত্তি করেই এই আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে ওই গবেষণায়। তবে গবেষকদের মতে, টানাটানির এই চিত্রটা যা হতে পারত, তার চেয়ে ৮৩% কম। এটি লকডাউনের ফলেই সম্ভব হয়েছে।

সর্বশেষ খবর