মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সর্দি জ্বর শ্বাসকষ্টে মৃত্যু আরও ৩৭

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৬ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ১১ জন মারা গেছেন। সব মিলিয়ে গতকাল ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরায় দুইজন, নারায়ণগঞ্জে তিনজন, নোয়াখালীতে একজন, বগুড়ায় একজন, পটুয়াখালীতে একজন, খুলনায় একজন, নেত্রকোনায় একজন ও সিলেটে একজন মারা গেছেন। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলে ২৬ জনের মৃত্যু : ঢামেকের করোনা ইউনিটে রবিবার রাত ১০টা থেকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জনের করোনা পজিটিভ ছিল। অনেকের করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট পেইন্ডিং রয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আবুল কাশেম (৬২), জহিরুল হক (৭৮), সাদিকুল ইসলাম (৫৫), হানিফ (৭০), আবদুল মতিন (৫৮), আবদুর রহমান (৬৫)। এ ছাড়াও করোনা উপসর্গ নিয়ে যারা মারা গেছেন তারা হলেন-রুবেল মিয়া (৩৮), মনিরুজ্জামান খান (৪৫), ফরহাদ মিয়া (৭০), সেলিনা (৪৪), নাজিম (৬৫), আসাদুজ্জামান (৪৮), আবুল হাসনাত (৫২), নাজিয়া (৩৯), ফজলু (২২), আম্বিয়া (৬০), খোরশেদ আলম (৬৫), বাবুল চৌধুরী (৬৩), খোরশেদা বেগম (৭০),  রমিজ উদ্দিন (৫৫), আয়েশা বেগম (৫০), খোদেজা বেগম (৫৬), ইরমাদ আলী (৫৭), মো. কবির (৫০), নাহিমা (২৬) ও গোলাম কবির (৭৫)। জেলায় জেলায় ১১ মৃত্যু : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন-দেবহাটা উপজেলার টাউনশ্রীপুর গ্রামের রাধাকান্ত ও সাতক্ষীরা শহরের পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার সাহাবুদ্দীন। রবিবার মধ্য রাতে ও গতকাল সোমবার সকালে তারা মারা যান। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. মানস কুমার জানান, মারা যাওয়া উভয়ের করোনার উপসর্গ ছিল। তারা করোনায় আক্রান্ত কিনা সে ব্যাপারে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে খুলনায় পাঠানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ খানপুর ৩০০ শয্যা করোনা হাসপাতালে শুধাংশু ধর চৌধুরী নামে করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন এক রোগী মারা গেছেন। গতকাল সোমবার বিকেলে হাসপাতালে তিনি মারা গেলে তার স্বজনদের অনুরোধে স্থানীয় কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু মৃত ব্যক্তির সৎকারের ব্যবস্থা করেন। এর আগে দুপুরে খানপুর ৩০০ শয্যা করোনা হাসপাতালে করোনার উপসর্গে ভর্তি থাকা আরও দুজন মারা গেছেন। দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. গৌতম রায় জানান, সোমবার শ্বাসকষ্টসহ নানা উপসর্গে দুজন রোগী হাসপাতালে আসলে আমরা তাদের ভর্তি নেই।

পরে তারা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাদের টেস্ট করতে দেওয়া হয়েছে। দুজনই পুরুষ। একজনের টেস্ট রিপোর্ট আমরা হাতে পেয়েছি, সে নেগেটিভ। আরেকজনের রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি। কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকেলে আমার ওয়ার্ডের চাঁদমারী এলাকার বাসিন্দা শুধাংশু ধর চৌধুরী মারা যান। নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আফসার রতন (৪৫) করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় নোয়াখালী সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যায়। নিহত রতন নরোত্তমপুর ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামের নুরুল হকের ছেলে। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় জ্বর, সর্দি নিয়ে এক পোশাককর্মী (৫০) মারা গেছেন। রবিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে আদমদীঘি উপজেলার উৎরাইলে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই ব্যক্তি ঢাকায় একটি গার্মেন্টে কাজ করতেন। ঢাকায় থাকা অবস্থায় জ্বর-সর্দিতে ভুগছিলেন। রবিবার বিকেলে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা থেকে তিনি নিজ বাড়ি উৎরাইলে যান। এরপর রাত ১টার দিকে তিনি মারা যান। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার রাতে উৎপল সরকার (৫৫) নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের পাবনা শাখায় প্রিন্সিপাল অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। রবিবার সকালে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে উৎপল সরকার হাসপাতালে ভর্তি হন। রাতে তিনি মারা যান। করোনা উপসর্গ নিয়ে পটুয়াখালীর বাউফলে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রবিবার রাতে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বয়স ছিল ৭০ বছর। তিনি এই উপজেলারই বাসিন্দা। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা সাসপেক্টেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের (৭০) মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি মারা যান। তিনি পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই)। বাড়ি নগরের খালিশপুর এলাকায়। নেত্রকোনায় বুকের ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক পুলিশ সদস্য (৫০) মারা গেছেন। রবিবার সকাল ১০টার দিকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর করোনা সন্দেহে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। করোনার উপসর্গ নিয়ে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি (৫৫)। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখনো ফলাফল মেলেনি। রবিবার বিকেলে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। চিকিৎসকদের পরামর্শে অন্য একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

সর্বশেষ খবর