মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ফেসবুক চিকিৎসায় সর্বনাশ

মৃত্যু বাড়াতে পারে মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক

জিন্নাতুন নূর

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে কার্যকর কোনো প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও চিকিৎসকরা বেশ কিছু ওষুধ রোগীকে সেবন করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন কিছু ওষুধ ব্যবহারের পর কার্যকারিতা পাওয়ার দাবি করেছেন কয়েকজন করোনা আক্রান্ত রোগী ও দেশীয় চিকিৎসক। আর বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়ায় মানুষ সেই নির্দিষ্ট ওষুধগুলো কিনতে ফার্মেসিগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এমনকি যারা সামান্য জ¦র বা সর্দি-কাশি, গলাব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তারাও এসব ওষুধ কিনতে হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দিয়েছেন। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এসব ওষুধ সেবনে উল্টো স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে দিয়েছেন। তাদের মতে, ফেসবুকের এই চিকিৎসা উল্টো সর্বনাশ ডেকে আনছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞ এবং একাধিক বিজ্ঞানীও সতর্ক করে বলেছেন, করোনার চিকিৎসায় যেভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বাড়ছে, তাতে এ রোগে মৃত্যুহার আরও বাড়তে পারে। মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ডা. টেড্রোস আধানম গাব্রিয়েসুস বলেছেন, ‘নতুন করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এতে উল্টো ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধক্ষমতা আরও বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে মহামারীর পাশাপাশি অন্য রোগেও মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ছে।’

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শুধু ফেসবুকে দেখে বা অন্য কারও পরামর্শে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কারণ ওষুধ সেবনের পাশর্^প্রতিক্রিয়া আছে। কেউ যদি করোনায় সংক্রমিত হন বা জ¦রে আক্রান্ত হন, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা ঠিক হবে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক দেখাতে পারলে ভালো। আর তা সম্ভব না হলে অন্তত টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে পরামর্শ নিলে তা বিজ্ঞানসম্মত ও যৌক্তিক হবে। ফেসবুকে দেখে ওষুধ সেবন করলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিশেষ করে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আছে, যেগুলো অনুমান করে সেবন করা যায় না, খেলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে। আর চিকিৎসক রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে কার কী অনুপাতে ওষুধ প্রয়োজন হবে তা বলে দিতে পারবেন। এ জন্য একা একা কাউকে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেতে নিরুৎসাহিত করেছেন তিনি। করোনা প্রতিরোধে ফেসবুকে যেসব ওষুধ সেবন করার বিষয়ে বেশি বলা হচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের আইভারমেকটিন গ্রুপের ইভেরা (৬ এমজি) ট্যাবলেট, নাপা এক্সটেন্ড, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রুপের জিম্যাক্স ৫০০ এমজি ট্যাবলেট, কাশির জন্য ফেক্সোফেনাডিন গ্রুপের ফেক্সো ট্যাবলেট (৬০, ১২০ ও ১৮০ এমজি), আইভারমেকটিন গ্রুপের ডেল্টা কোম্পানির স্ক্যাবো ট্যাবলেট, ডক্সিসাইক্লিন গ্রুপের অপসোনিন ফার্মার ডক্সিন ক্যাপসুল। এই ওষুধগুলো নিয়ে ফেসবুকে বেশ কিছু পোস্ট ভাইরাল হওয়ায় সারা দেশে গত এক মাসে ওষুধগুলোর চাহিদা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি বাজারে এসব ওষুধ সরবরাহ করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে দেশীয় ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো।

ওষুধবিক্রেতা ও ফার্মাসিস্টরা জানান, বর্তমানে করোনা থেকে মুক্ত থাকতে অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শপত্র ছাড়াই কিছু ওষুধ কিনছেন। এমনকি সুস্থ মানুষও প্রয়োজন ছাড়াই আগে থেকে এসব ওষুধ সংগ্রহ করে রাখছেন। কেউ কেউ ওষুধ সেবন করে সুস্থ হলে তা ফেসবুকে লিখে অন্যদের এসব ওষুধ সেবনের ব্যাপারে উৎসাহিত করছেন। আর এ ধরনের ফেসবুক পোস্ট অন্যরা গণহারে শেয়ার দিয়ে তা ভাইরাল করছেন। এরপর সাধারণ মানুষ হন্যে হয়ে ফার্মেসিতে এসব ওষুধ খুঁজছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশের একদল চিকিৎসকও করোনা আক্রান্ত রোগীদের অ্যাজিথ্রোমাইসিন, আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন ওষুধ প্রয়োগে ইতিবাচক ফল পেয়েছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে কোনো পরীক্ষা করা হয়নি।

সর্বশেষ খবর