মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

চিকিৎসক-পুলিশে সংক্রমণ মৃত্যু দুই-ই বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসজনিত কভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে সামনের সারির যোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মী আর পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মৃত্যুর মিছিলও দীর্ঘ হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন সিভিল সদস্যসহ ২৭ জন। গতকাল করোনায় আরও দুই পুলিশের মৃত্যু হয়েছে।

পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝেও সংক্রমণ বাড়ছে। চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ মোট ৩ হাজার ৫৫৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে এ পর্যন্ত ৪০ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৪ জন নার্স ও একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত চার দিনে অন্তত ৫ জন চিকিৎসক করোনায় মারা গেছেন। চিকিৎসায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে অতিদ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। 

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) হিসাবে, এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ২১০ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে আট শতাধিক চিকিৎসক ঢাকা শহরের। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬৯ চিকিৎসক সুস্থ হয়েছেন, আরও চার শতাধিক চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে ও বাড়িতে থেকে। সংস্থাটির পরিচালক ডা. মিলি দে এ প্রতিবেদককে জানান, করোনায় মোট মারা গেছেন ৩৫ জন। এ ছাড়াও ৫ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। 

এদিকে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, সর্বশেষ মারা যাওয়া দুজন হলেন এসআই এসএম মুকুল মিয়া (৫৫), অপরজন কনস্টেবল আবুল হোসেন আজাদ (৫১)। মুকুল মিয়া ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) খিলগাঁও থানায় কর্মরত ছিলেন। তিনি করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে পুলিশের ভাড়া করা রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বেলা ১১টায় মারা যান। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থানার চরকুলী গ্রামে। আর আবুল হোসেন আজাদ ভোর ৪টায় রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে মারা যান। তিনি ডিএমপির উত্তরা বিভাগের আজমপুর পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি নেত্রকোনার মদন থানার জয়পাশা গ্রামে। পুলিশের উদ্যোগে উভয়ের লাশ তাদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। 

পুলিশ সদর দফতরের তথ্যানুযায়ী, পুলিশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭ হাজার ৪০২ জন। এর মধ্যে ডিএমপিতেই আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৯৪৯ জন। সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছেন ৩ হাজার ৯০৪ জন।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্যে জানা গেছে, এ পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ১১ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৩১ জন। অন্যদিকে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সারা দেশে ১ হাজার ২১৩ জন নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪ জন। শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেই আক্রান্ত ১৭৩ জন এবং কুমিটোলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা ডা. মুজাহারুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, সামনের সারির যোদ্ধাদের মধ্যে সংক্রমণ কমাতে হলে সরকারকে মানসম্মত পিপিই সরবরাহ করতে হবে। চিকিৎসক এবং নার্সদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীকে পরীক্ষার প্রয়োজন আছে কিনা, রোগীর কতটুকু দূর থেকে দেখবে, রোগীর স্বজনদের সুরক্ষা আছে কিনা এবং নিজের সুরক্ষা নিশ্চিতসহ স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রটোকল মেইনটেইন করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে মাল্টি প্রফেশনাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া হাসপাতাল এবং চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ভাইরাসহ জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।

সর্বশেষ খবর