বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

এক ডজন সাংবাদিককে তলব করেছে ডিএমপি

ডিইউজের নিন্দা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের পাঠানো একটি চিঠি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে অন্তত এক ডজন সাংবাদিককে চিঠি দিয়ে তলব করা হয়েছে। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) মো. শাহ আবিদ হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বিভিন্ন সাংবাদিককে তারিখ উল্লেখ করে ডিএমপি সদর দফতরে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। তবে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিক নেতারা বলছেন, সংবাদ প্রকাশের জের ধরে পুলিশ এভাবে কোনো সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে পারে না। যে দফতর থেকে চিঠিটি ফাঁস হয়েছে সেখানে জড়িতদের খুঁজে বের না করে উল্টো সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকরা জানান, সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম আইজিপি বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে তার কার্যালয়ের ইমাম হোসেন নামে একজন যুগ্ম কমিশনারকে তিনি দুর্নীতিবাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি অধঃস্তন ওই পুলিশ কর্মকর্তা কমিশনারকে পুলিশের জন্য কেনাকাটায় পার্সেন্টেজ গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে অধঃস্তন ওই কর্মকর্তাকে ডিএমপি থেকে বদলি করার আহ্বান জানান কমিশনার। এই চিঠিটি নিয়ে দেশের একাধিক প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। এ কারণে ডিএমপি থেকে চিঠিটি কীভাবে ফাঁস হলো তা জানার জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রধানের পক্ষ থেকে অন্তত এক ডজন সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

একজন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার অনৈতিক তৎপরতার অভিযোগের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচারের পর অন্তত ১০ জন সাংবাদিককে তদন্ত কমিটির তলব করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। সংগঠনের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু গতকাল এক বিবৃতিতে এ ধরনের পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদও জানিয়েছেন।

ডিইউজে নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দফতর থেকে কয়েকদিন আগে পাঠানো এক চিঠিতে ‘সুষ্ঠু অনুসন্ধানের নিমিত্তে’ নির্ধারিত সময়ে ১০ জন সাংবাদিককে হাজির হতে বলা হয়েছে। পুলিশি অপরাধ সংক্রান্ত পুলিশ বিভাগের তদন্তে সাংবাদিকদের তলব করা এবং জিজ্ঞাসাবাদের পদক্ষেপ স্পষ্টতই প্রচলিত আইন ও রেওয়াজের পরিপন্থী। এ ধরনের চিঠি এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করছে, যা স্বাধীন সংবাদ প্রবাহের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

বিবৃতিতে ডিইউজে নেতৃবৃন্দ এ ধরনের হয়রানি ও মনস্তাত্ত্বিক চাপমূলক উদ্দেশ্যপূর্ণ চিঠি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে সাংবাদিকদের কাছে তথ্যের সূত্র জানতে চাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। কেননা, সূত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা একজন সাংবাদিকের মৌলিক ও পবিত্র দায়িত্বের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। তা ছাড়া, সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে গোপনীয়তার বেড়াজাল ভেঙে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য জনগণকে অবহিত করা।

সংবাদ প্রকাশের পর সংবাদকর্মীদের ডেকে পাঠানোর বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ ধরনের ঘটনা গণমাধ্যমের পেশাগত দায়িত্বে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির শামিল। তথ্যপ্রকাশ ও বাক-স্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থী। এমন পদক্ষেপ তারা নিতে পারেন না। তিনি বলেন, যে পুলিশ কমিশনার নিজেই তার অধীনস্থ কর্মকর্তাকে দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষের কাছে বদলির সুপারিশ করে চিঠি দিয়েছেন, সে কমিশনারের কাছ থেকে এটা স্ববিরোধী আচরণ। এটা কোনোভাবেই তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। বরং গণমাধ্যমকে তার সহায়ক শক্তি হিসেবে ভাবা উচিত।

সর্বশেষ খবর