শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সন্তানদের মনের কষ্ট বুঝতে হবে

---- মেহতাব খানম

সন্তানদের মনের কষ্ট বুঝতে হবে

পুরো বিশ্ব একটি সাইকোলজিক্যাল প্যানডেমিকের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি বলেন, বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের ওপরও মানসিক চাপ পড়ছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অভিভাবকদের কিশোর-কিশোরী সন্তানের মনের কষ্ট বুঝতে হবে। আর শিশুদের ব্যস্ত রাখতে হবে বিভিন্নভাবে। সর্বোপরি মা-বাবার মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো রাখতে হবে এবং দাম্পত্য সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে। তা না হলে কোনো কথাই কাজে আসবে না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।

মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক মেহতাব খানম বলেন, কিশোর-কিশোরীরা বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করে বেশি। আর ছোটবেলা থেকে মা-বাবার সঙ্গে যদি ভালো সম্পর্ক তৈরি না হয়, তবে তারা বহির্মুখী হয়। চিকিৎসা করতে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, কিশোর-কিশোরীদের ওপর খবরদারি করা হলে বা বারবার একই কথা বলা হলে তারা বিরক্ত হয়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে তারা আর ‘হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং’ বিষয়টি নিতে পারে না। সব সময় এই বয়সী ছেলেমেয়েদের মনের কথা জানতে না চেয়ে যদি শুধু পড়ালেখার কথা বলা হয়, তবে মানসিক আদান-প্রদান হয় না। মা-বাবার সঙ্গে এই বয়সে কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েদের দূরত্ব তৈরি হয়। কারণ তখন ওরা মা-বাবার জগৎ থেকে বেরিয়ে অন্য এক জগতে প্রবেশ করে। এ সময় তাদের আইডেনটিটি ডেভেলপ করে বলে তারা বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করে। বন্ধুদের সঙ্গে যে বিষয়গুলো বলতে পারে তা মা-বাবার সঙ্গে বলতে না পেরে তারা কষ্ট পায়।

মেহতাব খানম বলেন, করোনাকালে আরও বেশি সমস্যা হয়ে গিয়েছে যে তারা নিজেদের বন্ধুদের সঙ্গে দেখাও করতে পারছে না। তারা ইন্টারনেটে অনেক বেশি সময় কাটাচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করায় অন্য রকম একটি যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে কিশোর-কিশোরীরা। তবে যেসব পরিবারের সন্তানরা মা-বাবার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই ভালো সম্পর্ক তৈরি করেছে, তারা এখন ভালো সময় কাটাচ্ছে।  এই ছেলেমেয়েরা মা-বাবাকে কাজে সাহায্য করছে। তারা অভিভাবকদের সঙ্গে গল্পও করছে। করোনা পরিস্থিতি আমাদের আরও একটি বিষয় শিখিয়েছে। তা হলো মা-বাবার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যাতে শিশুরা সব কথা তাদের অভিভাবককে বলতে পারে। একই সঙ্গে সন্তানদের সঙ্গেও মা-বাবাকে এমনভাবে মিশতে হবে, যাতে করে তারা সন্তানদের মনের কষ্ট বুঝতে পারে। এই সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে তাদের দেখা করতে না পারার যে কষ্ট, সে ব্যাপারে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে হবে। স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সন্তানদের বিষয়টি সুন্দরভাবে বোঝাতে হবে। তিনি বলেন, ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে যারা ঘরে থাকতে চাইছে না, তাদেরও কিছু দিয়ে মা-বাবাকে ব্যস্ত রাখতে হবে। মা-বাবার কাজে সহযোগিতা করার জন্য উৎসাহী করে তুলতে হবে। শিশুদের ছোট ছোট কাজ, যেমন গাছ লাগানো, রান্নার কাজে সহযোগিতা করা- এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে উৎসাহী করে তুলতে হবে। আবার কাজ করার জন্য এই বাচ্চাদের প্রশংসাও করা উচিত। এতে করে তারা কাজের ব্যাপারে উৎসাহ বোধ করবে। এ ছাড়া ছোটদের সঙ্গে একসঙ্গে লুডো ও ক্যারম খেলতে হবে। তাদের নিয়ে কার্টুন দেখতে হবে। সর্বোপরি মা-বাবার মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো রাখতে হবে এবং দাম্পত্য সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে। তা না হলে ওপরের কথাগুলো কাজে আসবে না।

সর্বশেষ খবর