শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

হাসপাতালে ভর্তির পর পরই অনেকের মৃত্যু

উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন ৩১ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গতকাল ২০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৩ জনের করোনা পজিটিভ ছিল। বাকি ১৭ জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলে গতকাল করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৩১ জন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে একজন, কুমিল্লায় ছয়জন, ফরিদপুরে একজন, চাঁদপুরে তিনজন, নোয়াখালীতে দুজন ও নাটোরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের অনেকেই হাসপাতালে ভর্তির পর পরই মারা গেছেন। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহও করা হচ্ছে। অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলে ২০ মৃত্যু : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বুধবার বিকাল থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ২০ জনের  মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জন করোনা পজিটিভ ছিল। বাকি ১৭ জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তিরা হলেন, রহিমা (৩১), মো. সলিমুল্লাহ (৬৩), শাহিদা খাতুন (৮৮), ইব্রাহিম (৩৫),  আনোয়ার (৫৭), পুষ্প রানী (৫৮), রাজিয়া বেগম (৬৫), হালিমা (৫৫), ফারজানা (৪৫), সাহিদা (৫৫), আম্বিয়া খাতুন (৫৩), আজিজুর রহমান (৭০), আবদুল গনি (৭০), আফরোজা (৩৭), রাইসুদ্দিন (৬৫), সুবর্ণা (৬২), ফাতেমা (৭০), মিনা আক্তার (৩৮), মালেকা বেগম (৫০) ও তোফাজ্জল (৭০)।

জেলায় জেলায় ১৪ জনের মৃত্যু : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে বাদল ওরফে ভিখু (৪৫) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের হুরিপাড়া রসিকনগর গ্রামের মৃত মঞ্জুর আলীর ছেলে তিনি। সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, বুধবার রাত ৮টার দিকে বাদল ওরফে ভিখু গায়ে জ্বর, শুকনো কাশি ও গলাব্যথা নিয়ে সদর হাসপাতালে এলে ভর্তি প্রক্রিয়ার সময়ই তিনি মারা যায়।

পরে করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিভিল সার্জন পরিবারের বরাত দিয়ে আরও জানান, ঈদের পর বাদল ওরফে ভিখু ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে হরেক মালের ব্যবসা করতে যান। এক সপ্তাহ আগে তিনি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের রসিকনগর গ্রামের বাড়িতে আসে। আসার পর থেকেই তার জ্বর, শুকনো কাশি ও গলাব্যথা শুরু হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাতে দাফন করা হয়েছে। তার বাড়িও লকডাউন করা হয়েছে। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আগানগর ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের এক প্রভাষক (৫০) গতকাল ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে করোনার উপসর্গ নিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। তার বাড়ি মাদারীপুরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এদিকে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয়জন মারা গেছেন। গতকাল কুমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সাজেদা খাতুন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সূত্র জানায়, মারা যাওয়া ছয়জনের মধ্যে নগরীর মুরাদপুরের আবেদ আলী (৫২) করোনা পজিটিভ। বাকি পাঁচজনের রিপোর্ট আসেনি। তারা হলেন আদর্শ সদর উপজেলার হোসেনপুরের রহিমা খাতুন (৬০), সদর দক্ষিণের নকুল চন্দ্র দাস (৮৫), একই উপজেলার কোটবাড়ীর আজিজ আহমেদ (৪৪), চাঁদপুর শাহারাস্তির ইমাম হোসেন (৫০) ও সাজেদা খাতুন (৪৬)। ফরিদপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে ফরিদপুরের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ওই ব্যক্তির বয়স ৪৫ বছর। বাড়ি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলায়। চাঁদপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল সকাল ৬টার মধ্যে ২৫০ শয্যা চাঁদপুর সদর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে তাদের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। নারীর বয়স ৩০ বছর। বাকি দুজনের বয়স ৬০ বছর। ওই নারীর বাড়ি চাঁদপুর শহরে। দুজন পুরুষের মধ্যে একজনের বাড়ি হাজীগঞ্জ উপজেলায়, অন্যজনের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত ৮টায় জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা ৬০ বছর বয়সী একজনকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরে রাত ৯টার দিকে তিনি মারা যান। আর রাত ৯টার দিকে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ৩০ বছর বয়সী ওই নারী ভর্তি হন। রাত ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। করোনা উপসর্গ নিয়ে অপর ৬০ বছর বয়সী ব্যক্তি গতকাল সকাল ৬টার দিকে ভর্তি হন। পরে সাড়ে ৬টার দিকে তিনি মারা যান। নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে করোনার উপসর্গ জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হওয়া এক নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন ভর্তির পর পরই। বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মৃতদের একজন সুবর্ণচর, অপরজন বেগমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। সুবর্ণচর উপজেলার মারা যাওয়া ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা রিপোর্টে পজিটিভ পাওয়া যায়। আর অপরজনের নমুনা দিতে রাজি হননি স্বজনরা। নাটোরের লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নে ঢাকাফেরত এক ব্যক্তি শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন। গতকাল দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। জানা গেছে, তিনি চার দিন আগে ঢাকা থেকে বাড়ি যান। তখন থেকে তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গতকাল সকালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবর