শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

হজ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি সৌদিতে

বাতিলের শঙ্কায় হজযাত্রী ও এজেন্সিগুলো

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

সৌদি আরবের সিদ্ধান্ত না আসায় চূড়ান্ত নিবন্ধিত বাংলাদেশের ৬৫ হাজার ৫১২ হজযাত্রী নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। হজ বাতিলের শঙ্কায় রয়েছে হজযাত্রী ও এজেন্সিগুলো। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩০ জুলাই পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওই হিসাবে সময় আছে মাত্র ৪২ দিন। স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে ইতিমধ্যে ফ্লাইট শুরু হয়ে যেত। কিন্তু এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে চলছে সৌদি আরবে। ১৫ জুনের পরে সৌদি সরকার থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার কথা। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ফলে বাংলাদেশ সরকারও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এ বিষয়ে ধর্মসচিব মো. নূরুল ইসলাম জানান, সৌদি সরকার থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। সৌদি কী সিদ্ধান্ত দেয় তা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তিনি বলেন, সীমিত পরিসরে হজের সিদ্ধান্ত হলে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় আছে, প্রস্তুতির বিষয় আছে। করোনা সংক্রমণের এ পরিস্থিতিতে হজযাত্রার সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। হজযাত্রী পরিবহনে বিমান মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি দরকার। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা রয়েছে।

হাব নেতারা জানিয়েছেন, করোনা মহামারী না থাকলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া থাকলে চলতি ১৫ জুন থেকেই হয়তো হাজীদের ফ্লাইট যাওয়া শুরু হতো। কিন্তু মহামারীর কারণে এবার এখনো তারা এ নিয়ে কিছুই জানতে পারেনি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোকাব্বির হোসেন জানান, আমরা ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রস্তুত আছি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে আমরা ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারব। হজের সর্বশেষ প্রস্তুতি জানতে চাইলে হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন ‘হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদত হোসাইন তসলিম বলেন, আমরা প্রস্তুত থাকলে কী হবে, হজের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। জানা গেছে, মুসলিম উম্মাহর অন্যতম ইবাদত হজ। বিশ্বের লাখ লাখ মুসলমান প্রতি বছরই আল্লাহর ঘরে গিয়ে নিজেকে ইবাদতে মশগুল করেন। বিশ্ব এখন করোনার থাবায় আক্রান্ত। সৌদি আরবেও হানা দিয়ে অনেক প্রাণ ঝরিয়েছে এই করোনা। এর প্রভাব পড়েছে ওমরাহ হজেও। আর মূল হজ মৌসুম আসন্ন হলেও ২২২ বছর পর ফের তা বাতিল হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে এবার। ২০২০ সালে সরকারি-বেসরকারি কোটা মিলিয়ে হজযাত্রী এক লাখ ৩৭ হাজার। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার হজযাত্রীর হজে যাওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের হজযাত্রী এবার যেতে পারবে কিনা তা সৌদি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। গেলেও কত শতাংশ যেতে পারবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ। রয়টার্সের সূত্র মতে, সৌদি আরবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই পরিস্থিতিতে হজ বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করছে সৌদি সরকার। যদি কোনো কারণে বাতিল নাও হয়, তাহলে সীমিত পরিসরে হজ অনুষ্ঠিত হবে। সীমিত হজের অনুমতি দেওয়া হলেও একেবারে শেষ সময়ে এসে করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পাঠানো কঠিন হবে। এদিকে বাংলাদেশ হজযাত্রী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. আবদুল্লাহ আল নাসের বলেন, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। হজ বাতিল হলে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বেন। তবে করোনা সংক্রমণের কারণে শেষ পর্যন্ত হজ বাতিল হতে পারে এমন আশঙ্কা হাব নেতাদের। এদিকে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে হজ বাতিল হলে কিংবা বাংলাদেশ সরকার হজযাত্রী পাঠাতে না পারলে হজযাত্রীদের টাকা ফেরত দেবে ধর্ম মন্ত্রণালয়। শুধু তাই নয় হজযাত্রীদের কেউ পরের বছর যেতে চাইলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেই সুযোগও রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ধর্মসচিব মো. নূরুল ইসলাম জানান, যেতে না পারলে হজযাত্রীরা টাকা ফেরত পাবেন। যদি কেউ পরের বছর যেতে চান, তাও করতে পারবেন। জানা যায়, করোনার আগে মহামারী সার্স এবং মার্স প্রাদুর্ভাবের সময়েও সৌদিতে হজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এবার হজ আয়োজন করা সৌদি সরকারের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে হজযাত্রা থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রুনাই। এ বিষয়ে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশের কাউন্সিলর হজ (অতিরিক্ত সচিব) মাকসুদুর রহমান জানান, হজের বিষয়ে সৌদি সরকার এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। হজ বাতিলের বিবেচনা সংক্রান্ত রয়টার্সের সংবাদের বিষয়েও সৌদি হজ মন্ত্রণালয় কিছু বলেনি। সবাই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর