শনিবার, ২০ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

গার্মেন্ট শিল্পের সুবিধা সব শিল্পে দেওয়া উচিত

---- শেখ ফজলে ফাহিম

গার্মেন্ট শিল্পের সুবিধা সব শিল্পে দেওয়া উচিত

কভিড-১৯ বিক্ষিপ্তভাবে রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যেখানে ধারণা করা হচ্ছে ৩০ থেকে ২০ শতাংশ রপ্তানি কমে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে, তারা বলেছেন, যে অর্ডারগুলো বাতিল হয়েছে পরে সেগুলো আবার নেবেন। তবে       সে ক্ষেত্রে অর্ডার কিছু কমতে পারে। এ ধরনের সংকটজনক পরিস্থিতিতে আমাদের কটনবেইস তৈরি পোশাক থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ উচ্চমূল্যের পোশাক তৈরিতে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি তৈরি পোশাক খাতে সরকারের যে নীতিসহায়তা, নগদ প্রণোদনা, বাজেটারি সহায়তা রয়েছে এগুলো সারা জীবন চলতে পারে না। গার্মেন্ট শিল্প যে সহায়তা পায়, এখন বরং সেসব সুবিধা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে দেওয়া উচিত। কারণ একটা সময় গার্মেন্ট শিল্প ছিল শতভাগ আমদানিনির্ভর। এখন কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থাৎ গার্মেন্ট একসেসরিজ যে শিল্প আছে সেগুলোয় গুরুত্ব দিতে হবে। এবং আমাদের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ যেসব শিল্প আছে, সেগুলো যাতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিযোগী যেসব দেশ আছে সেখানেও পণ্য রপ্তানি করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ ছাড়া তৈরি পোশাক খাতে যে ‘ব্যাক টু ব্যাক’ এলসি সুবিধা আছে এটিও কেবল রপ্তানি খাতে নয়, সামগ্রিক দেশীয় শিল্পে তা কার্যকর করা উচিত। অর্থাৎ গার্মেন্ট সেক্টরে যেসব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে যার অপব্যবহার হয় এখন যদি এসব সুবিধা অন্য খাতেও দেওয়া হয়, তবে এসব সুবিধার অপব্যবহার কমে যাবে। কভিড-১৯-এর আগে থেকেই কিন্তু নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল আমাদের রপ্তানি আয়ে। এর একটা বড় কারণ ছিল, আমরা যে তৈরি পোশাক রপ্তানি করি তা মূলত কটনবেইস। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশ্বে এ ধরনের কটনবেইস পণ্যের চাহিদা গত তিন বছর ধরে কমছিল। তখন ম্যানমেইড সিনথেটিক ফাইবার, হাইভ্যালুড অর্থাৎ উচ্চমূল্যের পোশাকের ডিমান্ড বাড়ছিল। এখন আন্তর্জাতিক বিশ্বে চাহিদা রয়েছে সে ধরনের হাইভ্যালুড সিনথেটিক পণ্যে গুরুত্ব দিতে হবে। মেনমেইড সিনথেটিকের কারণে আমাদের চামড়াশিল্পেও চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমছে। আমাদের আইসিটি, হালকা প্রকৌশল খাতে অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে আমরা আমাদের বাজেট প্রস্তাবনায়ও বলেছি, আমদানি বিকল্প যেসব খাত রয়েছে সেগুলোকে ফোকাস করতে হবে। বিশেষ করে আমাদের গাড়ি, মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, টেলিভিশন ইত্যাদি যে পার্টস বা খুচরা যন্ত্রাংশ রয়েছে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমরা বলতে চাই, কোনো একটি নির্দিষ্ট খাত বা পণ্যের কথা না ভেবে নীতিসহায়তার ক্ষেত্রে আমাদের অভ্যন্তরীণ পুরো শিল্প নিয়েই ভাবতে হবে। যেমন ধরুন মোটরগাড়ি নির্মাণে সহায়তা দিলেন, কিন্তু গাড়ির যে কয়েল তৈরি হয়, টায়ার, নাট আছে, অন্যান্য কমপোন্যান্ট আছে সেদিকে নজর দিলেন না, তাহলে কিন্তু হবে না। বর্তমানে রপ্তানি খাতে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলার জন্য আমাদের পুরো অভ্যন্তরীণ ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে নীতিসহায়তা নিয়েই সরকারকে ভাবতে হবে। পাশাপাশি আমদানি বিকল্প পণ্যের দিকেও নজর দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের নীতির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকবে, এনবিআরের সহায়তা থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বলে দেবে, এই এই খাতকে সহায়তা কর। এ সহায়তা খুব বেশি দরকার নেই, অল্প হলেও চলবে। তবে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, সেটি যেন সব খাতকে নিয়ে সামগ্রিকভাবে হয়। আরেকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর দিকে সর্বোচ্চ নজর দিতে হবে। অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়লেই রপ্তানি সক্ষমতা বাড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর