বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে নিঝুম দ্বীপের অবস্থান। দ্বীপের তিন দিকে সাগর অন্যদিকে মেঘনার মোহনা। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য। সুন্দরবনের পরেই আয়তনে নিঝুম দ্বীপের অবস্থান। এর আয়তন ৯১ বর্গ কিলোমিটার। বল্লার চর, কামলার চর, চর মুরি এবং চর ওসমান- এই চার চরের সমন্বয়ে নিঝুম দ্বীপ গঠিত। ১৯৭৯ সালে সরকারের তৎকালীন ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, কৃষি, বন, মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা পর্যবেক্ষণে গিয়ে দ্বীপের সুনসান নীরবতায় মুগ্ধ হয়ে নামকরণ করেন ‘নিঝুম দ্বীপ’। অবশ্য এর আগেই বন বিভাগ কার্যক্রম শুরু করে চারজোড়া হরিণ অবমুক্তের মধ্য দিয়ে। সেই চারজোড়া হরিণ থেকে ১৯৯৬ সাল নাগাদ হরিণের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজারে উন্নীত হয়। পরে খাদ্য সংকট এবং বুনো কুকুরের অত্যাচারে হরিণের সংখ্যা হ্রাস পায়।
হরিণ ছাড়াও নিঝুম দ্বীপে রয়েছে বুনো কুকুর, খেক শেয়াল, সাপসহ বহু প্রজাতির জীব-জন্তু। আরও রয়েছে ৩৫ প্রজাতির পাখ-পাখালি, ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ-গাছালি। তার মধ্যে কেওড়া গাছেরই আধিক্য নজরে পড়ে। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি ‘কেরপা’ গাছ নামে পরিচিত। দ্বীপের বিশেষ আকর্ষণ উভচর প্রজাতির মাছ। মাছটির নাম ‘মারসৃপারি’। এরা জলে এবং স্থলে সমানভাবে বিচরণ করতে পারে। এদের দেখতে কিছুটা বেলে মাছের মতো। নিঝুম দ্বীপের বন প্রান্তরে রয়েছে সমুদ্র সৈকত। তেমন দীর্ঘ না হলেও বেশ পরিচ্ছন্ন। কোলাহল নেই। একেবারেই নিজের মতো করে সময় কাটানোর সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া নিরাপদও। এখানকার সমুদ্র সৈকত ততটা উত্তাল না হলেও বেশ নয়নাভিরাম। পর্যটকরা সৈকতের আকর্ষণে মুগ্ধ হয়ে বলেন, ‘কুয়াকাটা যদি সাগরকন্যা হয়, তাহলে নিঝুম দ্বীপ হচ্ছে সাগরপুত্র’। নিঝুম দ্বীপ দেখে দুই ধরনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় এক ধরনের সৌন্দর্য, অন্যদিকে দ্বীপ জোয়ারে নিমজ্জিত হয়ে গেলে আরেক সৌন্দর্য। জোয়ারে দ্বীপের চেহারাটাই পাল্টে যায়। জলবন বা রাতারগুল, ওই ধরনের কিছু মনে হয় তখন নিঝুম দ্বীপকে। দেখতে চমৎকার উপভোগ করার মতো দৃশ্য। উল্লেখ্য, দ্বীপ ভ্রমণে বাড়তি আকর্ষণ হচ্ছে ‘নিঝুম দ্বীপ ন্যাশনাল পার্ক’ এবং ওয়াচ টাওয়ার। টাওয়ারে চড়লে সব দ্বীপটাকেই এক নজরে দেখা যায়। সে আরেক সুন্দর, যা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া এক অপার্থিব আনন্দ।