রবিবার, ২১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

নীলফামারীতে তিস্তা বিপৎসীমার ওপরে

আতঙ্কে চার জেলার মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নীলফামারীতে তিস্তা বিপৎসীমার ওপরে

গত কয়েকদিনে ভারি বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার আশঙ্কায় নদী-তীরবর্র্র্তী এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাটের বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন ও পানি বৃদ্ধির ফলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, ফসলের মাঠ, আবাদি জমি। পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে আছে অসংখ্য মানুষ। আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : 

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর

রংপুর : কয়েকদিন ভারীবর্ষণ আর ভারতের গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ায় উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে তিস্তা নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এদিকে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার ভাঙনে বিলীন হতে চলছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র  জানায়, শুক্রবার রাত হতে তিস্তার পানি বাড়তে থাকে। রাত ৩টায় তিস্তা বিপৎসীমা অতিক্রম করে। পানির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তায় পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা অববাহিকার ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিহাটের হাতিবান্ধা, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন চর এবং নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

এদিকে গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চরচিলার খাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিলীন হতে চলেছে  তিস্তার ভাঙনে।

নীলফামারী : পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণের ফলে নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। এতে তিস্তার চরে আগাম বন্যা ও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টেপা খড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় টেপা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ী, চর খড়িবাড়ী ও টাপুর চরের শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে তিস্তা চরের বাদাম খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের ঢলে ও ভারীবর্ষণের কারণে শনিবার দুপুরে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলগুলোতে আগাম বন্যা ও জলাবন্ধতা দেখা দিয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। তিস্তা পারের মানুষ বন্যার আশঙ্কা করছেন। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিস্তায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। গতকাল সকাল ৯টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তা ব্যারেজ দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। জানা গেছে, গত তিন দিন ধরে ভারীবর্ষণ আর উজানের ঢলের কারণে তিস্তা নদীর চর এলাকাগুলোতে লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধিতে চরের কৃষকরা ফসল নিয়ে বিপাকে আছেন। উজানের পানি ও ভারীবর্ষণের কারণে তিস্তায় দেখা দিয়েছে বন্যা। এ দিকে হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ও গড্ডিমারীতে চার শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন। হাতীবান্ধা উপজেলা সানিয়াজান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান, আমার ইউনিয়নের ৫ ও ৬ ওয়ার্ডের লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে গত তিন দিন ধরে সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। করোনা আতঙ্কে থাকা নদীর চরের মানুষজন এখন বন্যা যেকোনো মুহূর্তে হানা দেবে এ আতঙ্কে রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি সামান্য বাড়লেও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি অস্বাভাবিক বেড়েছে। ফলে নদ-নদীর বিভিন্ন চরাঞ্চলে নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়ায় এখানকার মানুষ পড়েছে বিপাকে। ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় মানুষজন এখন বন্যার আশঙ্কা করছেন। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি আবারও বেড়েছে। তবে দক্ষিণ দিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি অনেকটা বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার নিচ দিয়ে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে বর্ষা শুরু হতে না হতেই করোনাভাইরাস আতঙ্কে থাকা নদী পাড়ের মানুষজন বন্যার আশঙ্কায় রয়েছেন। নদনদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নে গত একমাস যাবৎ নদী ভাঙছে। অন্যদিকে, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধিতে নদীভাঙা এসব মানুষ এখন বন্যা আতঙ্কে রয়েছেন। বর্ষার শুরুতেই এ এলাকায় আগাম বন্যায় এসব লোক এখন চিন্তিত। নিম্নাঞ্চলের চরগুলোতে তলিয়ে গেছে সবজি খেতসহ পাট ও ভুট্টা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, উজানের পানি এসে নদীর পানি বাড়ছে। বৃষ্টির পানি বেশি থাকায় নদীগুলো অল্প পানিতেই উপচে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর