শিরোনাম
রবিবার, ২১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্দিজীবন থেকে মুক্ত ৪৭১ শিশু

ভার্চুয়াল আদালতে জামিন, মুক্তির অপেক্ষায় আরও ৬৫ শিশু

আরাফাত মুন্না

রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে ১১ বছরের এক শিশু মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল গত ৩০ মার্চ। আদালতে হাজির করলে বিচারক শিশুটিকে টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠায়। করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে তখন আদালতে সাধারণ ছুটি থাকায় জামিন আবেদনের সুযোগ হয়নি তার। ১১ মে ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে একটি এনজিওর সহায়তায় ২০ মে জামিন পায় ওই শিশুটি। ঈদের আগেই শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় পরিবারের কাছে। এ পর্যন্ত এই শিশুটির মতো ৫৩৬ শিশুকে জামিন দিয়েছে ভার্চুয়াল আদালত। এর মধ্যে প্রক্রিয়া শেষে ৪৭১ শিশু বন্দী জীবন থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে গেছে পরিবারের কাছে। বাকি ৬৫ শিশুও মুক্তির অপেক্ষায়।

সমাজসেবা অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে শিশু ধারণ ক্ষমতা ৬০০ জন। ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর পূর্ব পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করছিল এক হাজার ১৪৭ জন শিশু। গত ২৫ কার্যদিবসে ৫৩৬ জন শিশুকে জামিন দিয়েছে আদালত। আর এর মধ্যে ৪৭১ শিশু মুক্তি পাওয়ার পরও এখন কেন্দ্রগুলোতে ৬৭৬ শিশু রয়েছে। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার চেয়ে এখনো অনেক বেশি শিশু সেখানে অবস্থান করছে। শিশু আইন-২০১৩ অনুযায়ী, বিভিন্ন অভিযোগে আটক এসব শিশু যাতে সাধারণ কারাগারে বড়দের সংস্পর্শে এসে বড় অপরাধী না হয়ে পড়ে, সে জন্য তাদের আলাদা রেখে সংশোধন করার জন্যই এই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখা হয়। সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দী শিশুদের সুরক্ষায় উদ্যোগ নেয় সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস। কমিটির প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন কমিটি ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনায় শিশু আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক থাকা শিশুদের একটি তালিকা প্রস্তুত করতে সমাজসেবা অধিদফতরকে বলা হয়। স্পেশাল কমিটি তাদের নেওয়া এসব পদক্ষেপ সময়ে সময়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে অবহিত করে তার অভিমত গ্রহণ করে পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করেন। শিশুদের পুরো সুরক্ষার বিষয়টি দেখভাল করছে এই কমিটি। পাশাপাশি ভার্চুয়াল কোর্টের বিচারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে ইউনিসেফ। একই সঙ্গে সমাজসেবা অধিদফতর আদালত অনুযায়ী শিশুদের তালিকা প্রস্তুত করে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। পরে শুনানি গ্রহণ করে এবং মামলার গুণাগুণ বিচার করে অভিযুক্ত শিশুদের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে শিশু আদালতগুলো।

গতকাল সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১১ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মোট ২৫ কার্যদিবসে ভার্চুয়াল আদালতে ৫৩৬ শিশুর অন্তর্বর্তীকালীন জামিন হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৭১ শিশুকে তাদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী প্রক্রিয়া শেষে বাকি ৬৫ শিশুকেও তাদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

ভার্চুয়াল আদালতে শিশুদের জামিন দেওয়াকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমো হোজুমি এক বার্তায় বলেন, আমি ভার্চুয়াল শিশু আদালত চালুর সিদ্ধান্তের প্রশংসা করছি এবং বন্দীদশা থেকে শিশুদের মুক্তি পাওয়াকে স্বাগত জানাচ্ছি। শিশুদের কল্যাণ ও সুরক্ষা অবশ্যই কভিড-১৯ মোকাবিলায় আমাদের কার্যক্রমের কেন্দ্রে থাকবে। সব ক্ষেত্রেই জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা শিশুদের জন্য এই মহামারীকে একটি স্থায়ী সংকটে রূপ নেওয়া থেকে প্রতিরোধ করতে পারি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের উচ্চ ও অধঃস্তন আদালতে নিয়মিত বিচার কাজ বন্ধ রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ৯ মে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। একই সঙ্গে উচ্চ আদালত থেকে জারি করা হয় বিশেষ প্র্যাকটিস নির্দেশনা। ফলে ১১ মে থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার পথ উন্মুক্ত হয়। এরপর শিশুদের জামিনের বিষয়ে উদ্যোগ নেয় সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস। তাদের সহযোগিতা করে সমাজসেবা অধিদফতর।

সর্বশেষ খবর