রবিবার, ২১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

শ্রীমঙ্গলে নতুন গিরিখাতের সন্ধান

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় প্রাচীন কয়েকটি গিরিখাত বা গিরিসংকটের সন্ধান পাওয়া  গেছে। খাসি ভাষায় লাসুবন বা পাহাড়ি ফুল নামে এই এলাকায় রয়েছে ছোটবড় অনেক পাথুরে ছড়া। এর মধ্যে বড় তিনটি গিরিখাত বা গিরিসংকট সম্প্রতি নজরে এসেছে সবার। এলাকাটি পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ হতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। তবে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করেই নতুন এই পর্যটন স্পটের উন্নয়নের কথা বলছেন পরিবেশবাদীরা।

জায়গাটির অবস্থান ঢাকা থেকে প্রায় ২১৫ কিলোমিটার, মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তবর্তী সিন্দুরখান ইউনিয়নের ঘন জঙ্গলবেষ্টিত পাহাড়ি এলাকা। প্রথমে জিপ বা মোটরসাইকেল নিয়ে, তারপর হেঁটে কয়েক কিলোমিটার। হাঁটার পথ পাহাড়ি ছড়া ও খাড়া পাহাড়।

সম্প্রতি নৈস্বর্গিক জায়গাটি ঘুরে দেখে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরো জায়গাটি পড়েছে স্থানীয় নাহার খাসি পন্টীর ভিতর। খাসি ভাষায় লাসুবন বা পাহাড়ি ফুল নামে ডাকা হয় এলাকাটিকে। একটি পাহাড়ি ছড়া ধরেই পুরো এলাকাটি ঘুরে আসা যায়। এই লাংলিয়াছড়া ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে এসেছে। প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ বেয়ে মিশেছে শ্রীমঙ্গলের বিলাস ছড়ায়। সাপের মতো আঁকাবাঁকা ছড়ায় মিশেছে প্রায় শখানেক ছোটবড় পাথুরে ছড়া। এর মধ্যে কয়েকটি গিরিখাত বা গিরিসংকট রয়েছে। স্থানীয় খাসি ভাষায় ক্রেম ক্লু, ক্রেম কেরি ও ক্রেম উল্কা নামে বড় তিন গিরিখাত পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। পাহাড় থেকে শ পাঁচেক নিচে এসব গিরিখাত কোথাও বড় আবার কোথাও সরু। রয়েছে ছোট ছোট ঝিরিধারা অবিরাম জলের শব্দ। স্থানীয়রা জানালেন, পুরো এলাকায় আছে ছোটবড় অর্ধশত ছোট ঝিরিধারা। পাহাড় বেয়ে নেমে আসা এসব ঝিরির সবচেয়ে বড়টিকে স্থানীয়রা ডিবারমিন ঝর্ণা নামে ডাকেন। নাহার খাসি পুণ্জীর প্রধান ডিবারমিন পতাম বলেন, জায়গাটি আমরা যতেœ রেখেছি প্রকৃতি পরিবেশের  কোনো ক্ষতি হতে দেইনি। এখানে পর্যটন উন্নয়ন  হোক তাতে আমাদের সমস্যা হবে না তবে পরিবেশের বিষয়টি সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। নয়তো আমাদের জীবন জীবিকা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। কারণ আমাদের কাছে প্রকৃতিই সব। আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই যেন সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার  মৌলভীবাজারের সমন্বয়ক আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, সম্প্রতি নতুন নতুন অনেক প্রাকৃতিক পর্যটন স্পটের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। পর্যটনের জন্য সুখবর হলেও প্রাণ-প্রকৃতির জন্য সুখবর নয়। বিষেশজ্ঞ পরিদর্শনের মাধ্যমে ক্যাটাগরি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। স্থানীয় আদিবাসীদের জীবন-জীবিকার যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, সীমান্তবতী এই স্থানে এখনো রাস্তাঘাট গড়ে ওঠেনি। সে কারণে কেউ যাতে ঝুঁকি নিয়ে আপাতত  সেখানে না যান আমরা সেই পরামর্শ দিয়েছি। রাস্তাঘাট তৈরিসহ উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের পর সীমিত আকারে পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সর্বশেষ খবর