সোমবার, ২২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

উত্তর মেরুতে নিশীথ সূর্যের দীর্ঘদিন

নাজমুন নাহার

উত্তর মেরুতে নিশীথ সূর্যের দীর্ঘদিন

উত্তর মেরুতে সূর্য পুরো ছয় মাস ধরে অস্ত যায় না। আশ্চর্যজনক সেই উত্তর মেরুর দেশগুলো এবার পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ এবং বড় দিন পালন করেছে।

দিনটি ছিল মিড সামার। ১৯ জুন রাত থেকেই শুরু হয় বছরের এই দীর্ঘতম দিন। যখন আকাশ কখনো অন্ধকার হয় না।? সুইডিশরা এই দিনে অনেক ঘটা করে উৎসব পালন করে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সবাই যার যার বাড়ির সামনে ছোট  ছোট গ্রুপ করে এটি পালন করেন। এ দিনে পরিবার ও বন্ধুরা সবাই মিলে একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করেন একই টেবিলে।

এ দিনে বনজঙ্গল থেকে ঘাসফুল, বনফুল সব কুড়িয়ে এনে ফুলের মুকুট তৈরি করে সবাই মাথায় পরেন। সারা দিন এই ফুলের মুকুট মাথায় রাখেন। সুইডিশসহ স্ক্যান্ডিনেভিয়ানদের এটি একটি ট্রেডিশন। শুধু তাই নয় এখানে একটি প্রচলিত প্রথা রয়েছে, কেউ যদি বালিশের নিচে সাত ধরনের ফুল আজকের দিনে রাখেন তবে তার হবু-স্বামীর এবং স্ত্রী সম্পর্কে সে স্বপ্ন দেখবে।

আর্টিক সার্কেলে গ্রীষ্মের অস্তিত্বের প্রায় বেশিরভাগ সময়কালে দিন-রাত সমান থাকে। এ ব্যাপারটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও আর্টিক শহর ও গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য মধ্যরাতের সূর্য জীবনের একটি সাধারণ ঘটনা! তবে এই অবস্থানগুলোর মধ্যে, সময়ের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে। উত্তর নরওয়ের বৃহত্তম শহর ট্রমসোর  লোকেরা প্রতি বছর প্রায় দুই মাস ধরে ঘটনাটি অনুভব করে- ২০ মে থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত। উত্তর  কেপে মধ্যরাতের সূর্য প্রায় ১৪ মে থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়। আশ্চর্যজনক মধ্যরাতে রোদের কারণ কী? : সবাই জানে পৃথিবী প্রতি ২৪ ঘণ্টা পরে একটি সম্পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করে, যা গ্রহের পৃষ্ঠে আমরা দিন এবং রাত হিসেবে যা বুঝতে পারি। যদি পৃথিবীটি তার অক্ষের জন্য লম্বা থাকে তবে আমরা গ্রহটিতে  যেখানেই থাকি না কেন, আমরা সারা বছর ধরে প্রতিদিন-১২ ঘণ্টা দিন এবং ১২ ঘণ্টা রাতে থাকতাম। তবে পৃথিবীটি প্রায় ২৩.৫ ডিগ্রি দ্বারা কাত হয়ে থাকে, সুতরাং গ্রীষ্মের অস্থির সময় এবং উত্তর  মেরুতে আর্টিক বৃত্ত অঞ্চলে পুরো ছয় মাসের জন্য সূর্য অস্ত যায় না। পৃথিবীর বক্রতাগুলোর কারণে সূর্যটি একটি গোলক এবং স্থির বিন্দু নয়, এবং আলো যেভাবে আচরণ করে মধ্যরাতের সূর্যটি অবশ্যই তার চেয়ে ১ ডিগ্রি পর্যন্ত কম দেখা যায়। আবার যখন কয়েক মাস ধরে  দেশের বিভিন্ন অংশে সূর্য ওঠে না, তখন গ্রীষ্মকালে এই দীর্ঘ সূর্যের আলোর প্রভাব দীর্ঘক্ষণ থাকায় শীতকালে মৌসুমী হতাশা কাটিয়ে উঠতে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা শেখায় এখানকার মানুষদের।  রাতের বেলা শহরে, পাহাড়ে, কিংবা নদীর কাছে, কিংবা সমুদ্রের পাড়ে হেঁটে বেড়ালে দিনের মতোই আলো দেখা যায় এখানে। এ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এখানকার অনেক মানুষ কিংবা ট্যুরিস্টরা মধ্যরাতে পাহাড়ে হাইকিং করে, কিংবা এই রাতকে উদযাপন করার জন্য সবাই রাতে ঘুরে বেড়ায়। [লেখক : বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী পর্যটক, ১৪০ দেশ ভ্রমণকারী]

 

সর্বশেষ খবর