মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
মেয়াদ শেষ ডাকসুর

দায়িত্ব ছাড়তে ভিপি জিএস এজিএসের নানা মত

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

নির্ধারিত এক বছর এবং গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্ধিত আরও তিন মাসের সময়কাল শেষে গতকাল শেষ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর মেয়াদ। এই সময়ের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় নিয়মানুযায়ী ডাকসুর বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু দায়িত্ব ছাড়ার ব্যাপারে একেক রকম অবস্থান নিয়েছেন ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস)।

পরবর্তী ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করার জন্য আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্বে থাকার কথা বলেছেন ভিপি নুরুল হক নূর। প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন জিএস গোলাম রাব্বানীও। ছাত্র প্রতিনিধিদের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে আরও সময় চান তিনি। তবে নির্ধারিত সময়ের পরে দায়িত্বে থাকা ‘অগণতান্ত্রিক’ মন্তব্য করে  ডাকসুর দায়িত্ব ছাড়ার কথা বলেছেন এজিএস সাদ্দাম হোসেন। তবে তিনজনেরই দাবি, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুততম সময়ে ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। প্রায় তিন দশক পর গত বছরের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ডাকসু নির্বাচন। ছাত্র প্রতিনিধিরা দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২৩ মার্চ। সে অনুযায়ী এই বছরের ২২ মার্চ এই সংসদের নির্ধারিত এক বছর পূর্ণ হয়। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নির্বাচনের তারিখ না ঘোষণা করায় ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আরও ৯০ দিনের দায়িত্ব পান তারা। গতকাল বর্ধিত ৯০ দিনের মেয়াদও শেষ হয়।

দায়িত্ব ছাড়ার বিষয়ে ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩৬৫ দিন দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও করোনা মহামারীর কারণে আমরা তা পারিনি। এ মুহূর্তে যদি আমরা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেই, তবে শেষ পর্যন্ত তো ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। সেই পরিবেশও নেই। আমি মনে করি, পরবর্তী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই সংসদের দায়িত্ব পালন করা উচিত। না হলে নেতৃত্বশূন্যতা তৈরি হবে। এই সংসদের এখন দুটি কাজ হবে, শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করা এবং ক্যাম্পাস খোলার সঙ্গে সঙ্গে যেন ডাকসু নির্বাচন হয়, সেটি নিয়ে কাজ করা। এই দুটি কাজের জন্য পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত এই সংসদের দায়িত্বে থাকা উচিত।

জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, বৈধ মেয়াদের এক মিনিটও বেশি আমি পদে থাকতে চাই না। কিন্তু করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় যে কাজগুলো আমরা শেষ করতে পারিনি, তা শেষ করার জন্য আমাদের সময় দেওয়া হোক। উপাচার্য স্যার চাইলে কমিটি ভেঙে দিয়েও এ কাজটি করতে পারেন। এটা আমাদের নৈতিক চাওয়া। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রথম কার্যদিবসে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। জিএসের কথাকে যৌক্তিক মনে করেন ভিপি নূর। জিএসের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি ওই রকমই। কাজের জন্য যে বাজেট সেটি আমরা পাইনি। অনেকে নিজের টাকা দিয়ে বিভিন্ন আংশিক কাজ করেছে, সেটি শেষ করার জন্যও তো কিছু সময় প্রয়োজন।

এদিকে গতকাল বিকালে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ডাকসুর দায়িত্ব ছাড়ার ব্যাপারে জানান এজিএস সাদ্দাম হোসেন। নির্ধারিত মেয়াদের পর দায়িত্বে থাকাকে ‘অগণতান্ত্রিক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ডাকসুতে দায়িত্ব পালন করে যাওয়াকে আমি মনে করি অগণতান্ত্রিক ও গঠনতন্ত্রবিরোধী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত শিক্ষার্থীরা আমাদের নির্বাচিত করেছে, এখন মেয়াদের পরেও যদি আমরা দায়িত্ব পালন করি, তবে এটা তাদের জন্য ভালো কোনো বার্তা দেবে না। প্রশাসনকে বলব, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দিতে হবে।

জিএসের বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, ডাকসু একটি প্রতিষ্ঠান, এতে ব্যক্তিকেন্দ্রিক কর্মকান্ড পরিচালনা বা কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার হওয়া ব্যাপারটা এমন নয়। অসমাপ্ত কাজ অবশ্যই রয়েছে। তবে সেটি ডাকসুর নতুন নেতৃত্ব শেষ করবে বলে আমি মনে করি।

সর্বশেষ খবর