বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

নিয়ম মানছে না ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল

করোনায়ও টিউশন ফির পাশাপাশি নিচ্ছে জরিমানা

আকতারুজ্জামান

নিয়ম মানছে না ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল

করোনা সংক্রমণের এই দুঃসময়েও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো। অভিভাবকদের চাপ দিয়ে টিউশন ফি আদায় করছে তারা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফি দিতে ব্যর্থ হলে আদায় করা হচ্ছে জরিমানাও। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

এ ছাড়া করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে টিউশন ফি দিতে না পারায় অনলাইন ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রাজধানীর কয়েক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের বিরুদ্ধে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভও করেছেন ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা। সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি থাকায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ও অন্যান্য ফি প্রদানে চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞা স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে সম্প্রতি বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে বকেয়াসহ মাসিক বেতন আদায় করতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ডের নিবন্ধিত ক্যামব্রিজ (এ লেভেল, ও লেভেল) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ও অধ্যক্ষদের বরাবর এ চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো সরকারের নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কাই করছে না। কিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল টিউশন ফি যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারায় নিচ্ছে জরিমানাও। করোনাকালে বকেয়া টিউশন ফি ছাড়াও জরিমানা আদায় করছে রাজধানীর প্লে পেন স্কুল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির লেভেল এইট এর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, লেভেল সেভেনে থাকাকালীন করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত এপ্রিল, মে ও জুন মাসের টিউশন ফি পরিশোধ করা হয়নি। সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দফায় দফায় টিউশন ফি পরিশোধে তাগিদ দিয়ে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। নির্ধারিত ব্যাংকে টিউশন ফি জমা দিতে গেলে ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে জরিমানা ছাড়া (বিলম্ব ফি) টিউশন ফি গ্রহণ করা হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা।

জানা গেছে, এর আগে করোনা মহামারীর সময়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের টিউশন ফি ৫০ শতাংশ মওকুফ চেয়েছেন রাজধানীর উত্তরার দিল্লি পাবলিক স্কুল (ডিপিএস) অভিভাবকরা। এ দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন তারা। রাজধানীর সানিডেল স্কুলও টিউশন ফির পাশাপাশি জরিমানা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, এ পরিস্থিতিতেও বিলম্ব ফি গ্রহণ করায় অভিভাবকরা বিপদে পড়েছেন। অভিভাবকদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে থাকা নম্বরে ফোন করেন প্রতিবেদক। নাম প্রকাশ না করে জুনিয়র সেকশন ওয়ানের এক শিক্ষক এ অভিযোগের কোনো সদুত্তর দেননি। টিউশন ফি পরিশোধে বিলম্ব করলে জরিমানা আদায় করছে বেশকিছু  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির বিবিএর এক শিক্ষার্থী প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন, প্রতি সেমিস্টারের টিউশন ফি ছয় ধাপে নেওয়া হচ্ছে। প্রতি ধাপের ফি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলেই ৬০০ টাকা করে জরিমানা নেওয়া হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থী এও বলেন, করোনা মহামারীর কারণে টিউশন ফিতেও কিছু ছাড় দিয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি পরিশোধে চাপ প্রয়োগ ও জরিমানা আদায় সম্পর্কে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, মহামারীর এ সময়ে টিউশন ফির চাপ দেওয়া অনুচিত। আর জরিমানা আদায় একেবারেই অনৈতিক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক খরচ কমে গেছে করোনার সময়ে। তাই টিউশন ফি আদায়ের ক্ষেত্রে নমনীয় হতে হবে। তিনি বলেন, রাজধানীর মতিঝিলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজেও শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আদায়ের ক্ষেত্রে চাপ দেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের দিনে-রাতে টেলিফোন করা হচ্ছে ফি পরিশোধের তাগিদ দিয়ে। এটিও বন্ধ হওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর