বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

নতুন রূপে সেজেছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

নতুন রূপে সেজেছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে দুনিয়া। সাধারণ মানুষের মতোই বদলে গেছে প্রকৃতি। আর এ বদলানোর চিত্র এখন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেও। দীর্ঘ সময় সাধারণ মানুষের আনাগোনা বন্ধ। নেই কোনো কোলাহল। আর এ সুযোগে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকৃতিও ডানা মেলেছে। প্রকৃতি আজ এখানে সেজেছে নতুন রূপে। সাফারি পার্কে থাকা নানা জাতের প্রাণী ও উদ্ভিদ যেন মুক্ত বিহঙ্গ। রাজধানী-সংলগ্ন গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কে সরেজমিন ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়ালের শালবন। নানা প্রজাতির উদ্ভিদের পাশাপাশি এ বনে কয়েক দশক আগেও বাস করত বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। কিন্তু স্থানীয় মানুষ দিন দিন বিরূপ পরিবেশ তৈরি করায় প্রকৃতির নানা উৎসের আবাসস্থল এ বন কিছুদিন আগেও হুমকির মুখে পড়েছিল। ২০১১ সালে বর্তমান সরকার এ বনকে আগের রূপে ফিরিয়ে এনে মানুষের বিনোদনের জন্য শালবনের ৩ হাজার ৮১০ একর ভূমি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক গড়ে তোলে। সরকারের প্রচেষ্টা আর পার্ক কর্তৃপক্ষের অক্লান্ত পরিশ্রমে দীর্ঘদিনে আগের অবস্থানে ফিরে এসেছে পার্ক এলাকার পরিবেশ। করোনার এই সময়ে পার্কটিতে যেমন প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পেয়েছে, তেমন দেশি-বিদেশি পাখপাখালির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে এ বন। তিন মাস ধরে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকায় হঠাৎ নীরব হয়ে যাওয়া পার্কটিতে পাখিরা কিচিরমিচির শব্দে মুখর করে রাখছে মুহূর্তগুলোকে। পার্ক কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, বিশাল এ সাফারি পার্কের কিছু এলাকা নিয়ে দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে সাফারি জোন। পার্কটিতে প্রায় ২৬ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে সীমানাপ্রাচীর। এর আগে স্থানীয় মানুষের নানা আনাগোনা ছিল প্রতিনিয়ত। প্রকৃতি হারিয়েছিল পরিবেশ আর বন্যপ্রাণীরা হারিয়েছিল বসবাসের উপযোগী স্থান। সম্প্রতি পুরো এলাকাকে নজরদারিতে আনা হয়। বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর প্রাকৃতিক খাবার জোগানের জন্য এসব এলাকায় রোপণ করা হয়েছে শতাধিক প্রজাতির বিলুপ্ত ও বিপন্ন জাতের ২০ হাজার উদ্ভিদ।

আর এতেই পরিবেশ ও প্রকৃতি যেন গর্জে উঠেছে। এ বর্ষায় উদ্ভিদগুলো বেড়ে উঠতেই ভিন্নতা এসেছে প্রকৃতিতে। ফল দেওয়া শুরু করেছে নানা প্রজাতির বৃক্ষ। পার্কের বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রাকৃতিক জলাশয় ও নালায় মাছ শিকারে প্রতিনিয়ত আসছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। গাছে গাছে ঝুলছে পাখির বাসা। নিরাপদ পরিবেশে ব্যাপক প্রজননে পার্কটি এখন পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান বলেন, ‘জাতির পিতার নামে এ বিনোদন কেন্দ্রটিকে প্রকৃতি ও পরিবেশ ঠিক রেখে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। মুজিববর্ষ সামনে রেখে বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে পার্কটি নানা প্রজাতির বৃক্ষ দিয়ে ছেয়ে দেওয়া হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, প্রাকৃতিক পরিবেশে বন্যপ্রাণীর খাবারের জোগান, তাদের নিরাপত্তা ও বসবাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হলে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রাণী আসবে। তাদের বংশ বৃদ্ধি পাবে। আমরা সেই পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। দেখা মিলেছে এর সুফল। আর বর্তমান করোনার সময়ে পার্কটিতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ হওয়ায় প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীরা ফিরে পেয়েছে বসবাসের অনুকূল পরিবেশ।’ পার্কটির বিস্তীর্ণ এলাকা কাজে লাগানোর পাশাপাশি প্রতি বছর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, বিশেষ করে প্রকৃতিকে বিশ্রাম দিতে কিছুদিনের জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। গাজীপুর পরিবেশ অধিদফতরের গবেষণা কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘করোনার কারণে কয়েক মাস প্রকৃতি বিশ্রামে থেকে নতুনভাবে জেগে উঠেছে। এর মাধ্যমে এই মহামারী আমাদের শিক্ষা দিয়েছে যে প্রকৃতিরও বিশ্রাম প্রয়োজন।’ তিনি জানান, প্রাকৃতিক নিয়মে যেখানে মানুষের আনাগোনা কমবে, সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ বা বন্যপ্রাণীর আনাগোনা বৃদ্ধি পাবে। সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় সেখানে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী বসবাসের উপযোগী পরিবেশ পাচ্ছে। তাই দলে দলে তারা এটিকে অভয়ারণ্য হিসেবে গ্রহণ করছে। সঙ্গে প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে প্রাণ।

সর্বশেষ খবর