বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় থেমে নেই জঙ্গিরা

সদস্য ও ফান্ড সংগ্রহ চলছে অনলাইনে

সাখাওয়াত কাওসার

চলমান করোনা মহামারীতেও থেমে নেই জঙ্গিরা। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসার আল ইসলাম ও আল্লাহর দলের সদস্যরা করোনা পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবেই নিচ্ছে। বসে নেই আরেক নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সদস্যরাও। তৎপরতা চালাচ্ছে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন অত্যাধুনিক অ্যাপসের মাধ্যমে। বিগত বছরগুলোতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একের পর এক অভিযানে দুর্বল হয়ে পড়া বিভিন্ন সংগঠন অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে এক প্লাটফর্মে আসারও চেষ্টা চালাচ্ছে। সম্প্রতি এসব সংগঠনের ১৭ জন সদস্য গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে এমনই তথ্য আদায় করেছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল মোস্তফা সারোয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো আগের তুলনায় এখন অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া বহুদিন ধরেই জেএমবি, আল্লাহর দল ও আনসার আল ইসলাম এক প্লাটফর্মে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে নানা মতবিরোধের কারণে এখনো তারা সেটি করতে পারেনি।

২০ জুন র‌্যাব-১-এর একটি দল ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আল্লাহর দলের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের তিন দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্য সুবিধাজনক সময়ে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা আছে আল্লাহর দলের। জঙ্গি সংগঠনটির নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা থাকার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন তারা। ১৯৯৫ সালে মতিন মেহেদী ওরফে মুমিনুল ইসলাম ওরফে মতিন মাহবুব ওরফে মেহেদী হাসান ওরফে মতিনুল হকের নেতৃত্বে আল্লাহর দল নামের জঙ্গি সংগঠনটি সৃষ্টি হয়। নিষিদ্ধ এই দলটি ২০১৪ সালে মতিন মেহেদীর নির্দেশে  নাম পরিবর্তন করে আল্লাহর সরকার নাম ধারণ করে।

আগে গ্রেফতার জঙ্গিদের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ৯ জুন মহাখালী থেকে জেএমবির দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-২। তাদের কাছে উদ্ধার করা হয় জঙ্গিবাদের নানা ধরনের আলামত, উগ্রবাদে উৎসাহিত করার পুস্তক এবং জঙ্গি তৎপরতার পরিকল্পনা-সংবলিত দুটি কম্পিউটার। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এক কর্মকর্তা বলছেন, চলমান মহামারীর সময়ে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম আগের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। সময়মতো নির্দেশনা পৌঁছাচ্ছে না। জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা পুলিশের বিশেষায়িত অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনায় মারা গেলে শহীদ হবে এমন ধারণার ওপর থেকেই জঙ্গিরা তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে আমরাও আমাদের কাজটি করে যাচ্ছি। কেউই নজরদারির বাইরে নয়।’ ৩০ মে পর্যন্ত আনসার আল ইসলামের একটি গ্রুপের আট সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-২। র‌্যাব-২-এর স্পেশালাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানির কমান্ডার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, আনসার আল ইসলামের গ্রেফতারকৃত আটজনের মধ্যে ইতিমধ্যে চারজন তাদের তৎপরতা থাকাসহ নানা বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দি মোতাবেক তারা পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে থাকা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের মতো দেশের প্রত্যন্ত একটি এলাকা দখলে নিতে চায়। সেটি কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলের বা কোনো গহিন জঙ্গলের গ্রাম হতে পারে। সেখানে তারা মুসলিম ভিলেজ গড়ে তুলবে। গ্রামটি ইসলামী আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। সেখান থেকেই তারা দেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্য সশস্ত্র অপারেশন চালাবে। মুন্সীগঞ্জ, সিলেট ও পাবনায় পরিবেশগত কারণে তাদের তৎপরতা তুলনামূলক বেশি। ইসলামের পথে যাদের বাধা বলে তারা মনে করে, তাদের হত্যাই তাদের প্রধান কাজ। হত্যার ক্ষেত্রে তারা আর আগের মতো ছুরি বা চাকু বা চাপাতি ব্যবহার করবে না। দ্রুত হত্যা নিশ্চিত করতে তারা পিস্তল বা রিভলভারের মতো আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের অর্থদাতা মুহিব মুশফিক খান ঢাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছে। তারা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ও মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটানোর পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে নানা পরামর্শ করত। তাদের টার্গেট নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কিশোর ও যুবকরা। আনসার আল ইসলামই আগে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে লেখক, প্রকাশক, বুদ্ধিজীবী, ব্লগার হত্যা করত। ২০১৫ সালে নিষিদ্ধ হলে নাম বদলে তারা আনসার আল ইসলাম হয়। তারা আল-কায়েদা ও আইএসের অনুসারী। র?্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাসেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনটির অনেক সদস্য করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ঢাকাসহ আশপাশ এলাকায় অবস্থান করছে এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। তাদের টার্গেট হলো সদস্য সংখ্যা বাড়ানো এবং ফান্ড সংগ্রহ। তবে আমরা আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর