বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে শামস উল ইসলাম, এমডি অগ্রণী ব্যাংক

ব্যাংক খাতের সামনে নতুন সুযোগ এসেছে

আলী রিয়াজ

ব্যাংক খাতের সামনে নতুন সুযোগ এসেছে

শামস উল ইসলাম

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শামস উল ইসলাম বলেছেন, ‘সংকট যেমন আছে, তেমনি সম্ভাবনাও আছে আমাদের সামনে। করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। ব্যাংকিং খাতেও নতুন অনেক কিছু সংযোজিত হবে। প্রচলিত ব্যাংকিং ধারা থেকে পুরো খাত বের হয়ে আসছে। উদ্যোক্তাদের সচেতনতা আছে। শিগগিরই রপ্তানি-বাণিজ্য স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে আসবে। বর্তমানে ডলার সংকট নেই, তারল্য সংকট নেই। নতুন এফডিআই আসছে। এতেই বোঝা যায় আশঙ্কা কাটিয়ে আমাদের সামনে নতুন সুযোগ তৈরি হবে।’ বিশিষ্ট ব্যাংকার রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে কয়েক বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন শামস উল ইসলাম। এই ব্যাংকে দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন বিনিয়োগ ও আমানত সংগ্রহ ছাড়া অটোমেশন নিয়ে নানা কাজ করেছেন তিনি। পুরনো ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনী, তার লেখা বইপত্র নিয়ে ব্যাংকে গড়েছেন বঙ্গবন্ধু গ্যালারি। তার এই গ্যালারির ধারণা এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে করোনা সংকটকালীন দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকিং খাতের চাপ ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন এ প্রথিতযশা ব্যাংক  কর্মকর্তা। শামস উল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে আর্থিক লেনদেন বিবেচনায় দেশের সংকট নেই। কারণ ডলারের সংকট নেই। বাজারে পর্যাপ্ত নগদ টাকার সরবরাহ আছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দরও নিয়ন্ত্রণে। ফলে মানুষের ওপর সে অর্থে চাপ খুব কম। তবে এখন চাপ কিছুটা কম থাকলেও এটা দীর্ঘস্থায়ী হবে। বড় একটি ঝুঁকি আমাদের সামনে আছে। জুন পর্যন্ত কোনো পেমেন্ট নেই। ব্যাংকগুলোতে তাই তারল্যের সংকট নেই। তবে জুলাই মাসের পর বড় পেমেন্টগুলো দিতে হবে। তখন একটি বড় চাপ তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া এখন আমদানির পরিমাণ কম থাকায় ডলারের চাহিদা তুলনামূলক কম। সে কারণে ডলারের বাজারে সংকট দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলে বড় ধরনের চাপ তৈরি হবে। যেহেতু আমাদের রপ্তানি-বাণিজ্য প্রায় বন্ধই রয়েছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ এখন স্বাভাবিক থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকি আছে, সেজন্য ব্যাংক খাতে খুব সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘চাপ থাকলেও ব্যাংক খাতের সামনে সম্ভাবনাও আছে। চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ পরিস্থিতি বা বাণিজ্যযুদ্ধের একটি ইতিবাচক ফল বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। এতে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে। চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও ভালো হবে, যা অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। বিপুল পরিমাণ এফডিআই আমাদের দেশে আসবে। বাণিজ্যিক সুযোগ তৈরি হবে।’ অগ্রণী ব্যাংকের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘ব্যাংক খাত থেকে সরকার যে ঋণ নেবে, তাতে সংকট বাড়বে বলে আমি মনে করি না। সরকার এ বছর বাজেটে অন্যান্য খাতের সঙ্গে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়ে আসার সুযোগ দিয়েছে। সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়ায় অনেক টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে আসবে। কিছু হয়তো শেয়ারবাজারেও যাবে। তারল্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। এটা দিয়ে চাপ সামাল দেওয়া যাবে।’ শামস উল ইসলাম বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি অ্যাপস করেছি। এর মাধ্যমে প্রবাসী শ্রমিকরা নিজের বাসায় বসেই দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন। মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের সঙ্গে আমরা একটি লেনদেন চালু করছি। এর মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংকের গ্রাহক দুই অ্যাকাউন্টে লেনদেন করতে পারবেন। মানুষ এখন নগদ ক্যাশ হাতে নিতে চান না। তারা মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই লেনদেন করতে চান। করোনা-পরবর্তী আমাদের এই অটোমেশন ব্যাংকিং ম্যাসিভ আকারে বাড়বে। এটি একটি বড় ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ৩০ জনের বেশি কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর পরও আমরা সব ধরনের কার্যক্রম চালু রেখেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোস্টারিং করে কর্মকর্তারা অফিস করছেন। গ্রাহকদের সব ধরনের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

সর্বশেষ খবর