শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রতিকূলতায়ও টিকে আছে ঘানি

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

প্রতিকূলতায়ও টিকে আছে ঘানি

আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার সব ঐতিহ্য একে একে হারানোর পথে। এসবের মধ্যে কলুর বলদ অন্যতম। আগে কলুর বলদের মাধ্যমেই ঘানি ভেঙে তেল তৈরি করা হতো গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে। কিন্তু প্রযুক্তির ছোঁয়ার ফলে এখন আর নেই সেই ঘানি, বা ঘানি ভেঙে তেল তৈরির প্রক্রিয়াটি। তবে বর্তমান সময়ে এখনো অনেকেই লাভ-ক্ষতির হিসাবে না গিয়ে সন্ধান করে চলেছেন প্রাকৃতিক বিশুদ্ধতার। বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আজও সংগ্রাম করে যাচ্ছেন ঝিনাইদহের মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষ। যেখানে রয়েছে কলু, কলুর বলদ, চটকা কড়াই কাঠ ও বাবলা কাঠ মিশ্রিত ঘানি, দেশি সরিষা আর শতভাগ বিশুদ্ধতা। কাঠের বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো হাতে তৈরি যন্ত্রের চারদিকে নির্বিকারভাবে ঘুরে চলেছে কলুর বলদ, তার দুই চোখ বাঁধা বাঁশের তৈরি বিশেষ ধরনের দুটি ছোট ঝুড়ি তার ওপর কাপড় দিয়ে। কোনো রকম অসম্মতি ছাড়াই অনবরত ঘুরে চলছে গরু। আর  তৈরি হচ্ছে দেশি সরিষার খাঁটি তেল। ফোঁটায় ফোঁটায় তেল জমা হচ্ছে নিচে রাখা পাত্রে। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের একতারপুর গ্রামের আবু বক্কর, মোতালেব মালিথা, কানাইডাঙ্গা গ্রামের আবদুস সাত্তার, খালেক মালিথা, শহিদুল মালিথা, পুরনন্দপুর গ্রামের আবদুল মালেক, আবদুল জলিল, বজরাপুর গ্রামের আবদুল কুদ্দুস, লিটন মালিথা সবাই এই শিল্পকে তাদের পেশা হিসেবে নিয়েছেন। এই শিল্পের ওপর তাদের পুরো পরিবারের জীবন-জীবিকা জড়িত। তারা প্রত্যেকে প্রতিদিন ১২ কেজি করে ঘানি ভাঙায়। যা থেকে কোনো রকম তাদের সংসার চলে। কখনো কখনো নিজে কেনা সরিষা, নারিকেল বা তিল ভাঙিয়ে তেল তৈরি করছেন। আবার কখনো অন্যের জিনিস ভাঙিয়ে তেল তৈরি করে টাকা নিচ্ছেন। কানাইডাঙ্গা গ্রামের আবদুস সাত্তার জানান, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তেল তৈরিতে সময়, শ্রম ও খরচ দুটোই অনেক বেশি প্রয়োজন হয়। শক্তিশালী গরুগুলোর খাবার জোগাতেও খরচ হয় অনেক অর্থ। আর তাই এই তেলের দামটিও বেশি। তবে দাম বেশি হলেও প্রায় দুষ্প্রাপ্য এই ঘানি তেলের চাহিদা ব্যাপক। এ ব্যাপারে একতারপুর গ্রামের আবুবক্কর মালিথার স্ত্রী সোনিয়া খাতুন জানান, এ পর্যন্ত কেউ কোনো খোঁজও নেয়নি এবং সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা আমাদের দেওয়া হয়নি।

তবে ঊষা নামে একটি এনজিও থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লোন করে বিপাকে পড়েছি।

সর্বশেষ খবর