শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বিদেশি বিনিয়োগের নিয়ম কানুন সহজ করার উদ্যোগ

সহজে বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে অর্থ জমা, উত্তোলন ও তাদের বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে পদক্ষেপের সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯ এর কারণে পুুরো বিশ্ব আজ স্থবির। ঠিক সেই সময় সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের। সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ বাংলাদেশ। এ জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের জটিলতা কমিয়ে এনে বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির পূর্বশর্ত হিসেবে বিদেশিরা যাতে তাদের লভ্যাংশের অর্থ সহজে দেশে নিতে পারে সেজন্য ব্যাংকিং সেক্টরে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে তা চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি পাঠিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। চিঠির অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছেও পাঠানো হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে সহজে বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে অর্থ জমা, উত্তোলন ও তাদের বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করতে পারেন, সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং প্রক্রিয়া আরও সহজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে কাজ করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ ছাড়া বিদ্যমান ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭-কে বাংলা ভাষায় রূপান্তর, যুগোপযোগী এবং কী কী পরিবর্তন প্রয়োজন তা স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে দ্রুত সংসদে পাসের কথাও বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। শুরু হয়েছে নতুন অর্থনৈতিক মেরুকরণ ও বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চীন থেকে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র স্থানান্তরের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলের অনেক দেশ যেমন- ভারত, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়া এ ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে নিজ নিজ দেশের বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইন, বিধিবিধান, কর ব্যবস্থা এবং ব্যাংকিং পদ্ধতি সহজতর করছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ দেশসমূহের সংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামোয়, নীতি সহায়তায়, ব্যাংকিং নিয়মনীতি ও পদ্ধতিতে প্রযুক্তির ব্যবহারসহ ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ৮ জুন অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নির্বিঘ্নে নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বিনিয়োগে এবং বিনিয়োগকৃত অর্থ-লভ্যাংশ প্রত্যাবাসনে সর্বোত্তম ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতকরণের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশের সহজলভ্য শ্রমবাজার, বর্তমান স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা, উদীয়মান ও দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং অবকাঠামোর ক্রমাগত উন্নয়ন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করছে। এ ছাড়া এনআরবি বা প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দেশের শিল্প, কৃষি এবং সেবাখাতে বিনিয়োগে অধিক হারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আমানতের সুদের হার বিদেশি ব্যাংকের তুলনায় অধিক হওয়ায় দেশীয় ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিমে তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছেন। কিন্তু অনেক সময় সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদ শেষে অর্থ উত্তোলন এবং প্রবাসে অর্থ প্রত্যাবাসনের সময় তারা ব্যাংকের জটিল প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হন, যা অনেক প্রবাসীকে দেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করে। চিঠিতে আরও বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগ সহজ করার জন্য এ আইনে আর কী কী পরিবর্তন আনা প্রয়োজন তা অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা সংস্থা যেমন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় এবং পরামর্শক্রমে চূড়ান্ত করে ও মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে দ্রুত এ আইনটি যাতে জাতীয় সংসদে পাস হয়ে আইনগত বাধা দূর হয়, সেই উদ্যোগ এ বিভাগে প্রক্রিয়াধীন। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয়, সেজন্য ব্যাংকিং প্রক্রিয়া সহজতর ও গতিশীল করা অতি প্রয়োজন বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ খবর