শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
রিফাত হত্যার এক বছর

করোনা পরিস্থিতিতে চলছে না বিচারকাজ

বরগুনা প্রতিনিধি

বরগুনার আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত ওরফে রিফাত শরীফ হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো আজ। আজকের এই দিনে বরগুনার কলেজ রোড এলাকায় স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। এই নির্মম হত্যার ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে রিফাতের পরিবারে। সেই থেকে অদ্যাবধি দুর্বিষহ দিন কাটছে তাদের। হত্যাকারীদের ফাঁসি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন তারা। এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে আদালতে বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে এ মামলার। আইনজীবীরা বলছেন, করোনার ক্রান্তিকাল কাটিয়ে উঠলেই শেষ হবে বিচার। বরগুনার কলেজ রোড এলাকায় ২০১৯ সালের ২৬ জুন সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও উপস্থিত শত শত মানুষের সামনে কুপিয়ে খুন করা হয় রিফাত শরীফকে। এ ঘটনায় ২৭ জুন ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। এক এক করে যখন আসামিরা গ্রেফতার হচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে ২ জুলাই ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড। ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয় ১৬ জুলাই। এ দিন সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে পুলিশ লাইনে নিয়ে রিফাত হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর ২৮ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আসেন মিন্নি।

১ সেপ্টেম্বর মিন্নিকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করে দুই ভাগে বিভক্ত মামলার চার্জশিট দেয় পুলিশ। বর্তমানে মামলাটি বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং শিশু আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। দায়রা আদালতে ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলাটি আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। শিশু আদালতে মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ এখনো হয়নি। করোনার ক্রান্তিকাল কেটে গেলে আদালতের স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হলে আবারও সাক্ষ্যগ্রহণ চালু হবে। এ মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের মধ্যে মিন্নি ও অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের মধ্যে সাতজন আসামি জামিনে রয়েছে। বাকিরা কারাগার ও যশোর শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মুসা এখনো পলাতক। নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যুর পর আমাদের পরিবারের সদস্যদের দিনগুলো খুবই দুর্বিষহ কেটেছে। একমাত্র আল্লাহ পাকই জানেন কীভাবে আমরা দিনগুলো পার করেছি। সরকারের প্রতি আমার আকুল আবেদন, যাতে এই মামলাটির বিচারকাজ শেষ করে দ্রুত রায় দেওয়া হয়। আমি নিজেই হৃদরোগে আক্রান্ত। তাই আমি যেন আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে পারি।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে মারা গেছে কিন্তু পাশে আমি কাউকে পাইনি। দেশে এত দাতা সংস্থা, এত মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে কিন্তু তারা কেউ আমার পাশে দাঁড়ায়নি।’ মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘সারা দেশের মানুষ দেখেছে আমার মেয়ে রিফাতকে বাঁচাতে অস্ত্রের মুখে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কীভাবে লড়েছে। মামলার বিচারকাজ শেষ হলে আমার মেয়ে নিরপরাধ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পাবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস আছে আমার।’ শিশু আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, শিশু আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়া সব সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। করোনার কারণে আদালতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। করোনার ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে আদালত স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ফিরলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারকাজ শেষ হবে।

বরগুনার দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের বিরুদ্ধে ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলাটি এখন আত্মপক্ষ সমর্থনের অপেক্ষায় রয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু না হলে এত দিনে হয়তো মামলাটিতে বিজ্ঞ আদালত রায় দিতেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি পরিচালনা করেছি। আদালতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া শুরু হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ মামলার রায় হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

সর্বশেষ খবর