শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম বন্দরে বাড়ছে আমদানি-রপ্তানি

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রধান দ্বার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণভীতি কাটিয়ে কর্মমুখর হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর। গত এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ দুটোই বেড়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা এসেছিল গত এপ্রিলে। এপ্রিলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানির পরিমাণ কমেছিল আগের তুলনায় প্রায় ৮৭ শতাংশ। একই সময়ে আমদানি কমেছিল প্রায় ২২ শতাংশ। সে ধাক্কা কাটিয়ে এপ্রিল পেরিয়ে মে মাসে রপ্তানিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। করোনা আতঙ্কের মধ্যে একে সুখবর হিসেবেই দেখছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। মে শেষে চলতি জুনেও আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ আরও বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বন্দর ও কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, অর্থনীতির লাইফলাইন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশের মোট আমদানির ৮২ শতাংশ আসে; আর রপ্তানি পণ্যের ৯১ শতাংশই যায় এ বন্দর দিয়ে। সুতরাং এপ্রিলে এ বন্দরে পণ্য ওঠানামায় ধস নামায় যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছিল; তেমন মে মাসে রপ্তানি বাড়ায় আশান্বিত হয়ে উঠছেন ব্যবসায়ীরা। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এপ্রিলে করোনার কারণে আমদানি কমেছে ঠিক কিন্তু কাস্টমসের অস্পষ্ট নির্দেশনার কারণে এপ্রিলে যে পরিমাণ আমদানি হয়েছে সে পরিমাণ পণ্য বন্দর থেকে ছাড় দিতে পারিনি। কনটেইনারজটের কারণে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নির্ধারিত ২৩টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করতে পারিনি। মে মাসে সে জটিলতা না থাকায় আমদানি ও রপ্তানি দুই খাতেই অগ্রগতি হয়েছে। এ ধারা চলতি জুনেও অব্যাহত রয়েছে। ফলে জুন শেষে আমরা আরও সুখবর দিতে পারব বলে আশা করছি। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্র জানিয়েছেন, গত এপ্রিলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বাণিজ্যিক ও বন্ডেড পণ্য (রপ্তানির শর্তে শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত) আমদানি হয়েছে ৬৬ লাখ ৫১৮ মেট্রিক টন। অথচ এর আগের অর্থবছর ২০১৮-১৯-এর এপ্রিলে একই পণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল ৮৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯৬ টন। গত এপ্রিলে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আমদানি কমেছে ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অন্যদিকে গত এপ্রিলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে ১২ কোটি ৪৩ লাখ ১২ হাজার টন পণ্য। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আলোচ্য বন্দর দিয়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৮ কোটি ৯৪ লাখ ৫৪ হাজার টন পণ্য। অর্থাৎ গত মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৮৭ শতাংশ। তবে এপ্রিলের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিইএ) প্রথম সহসভাপতি খন্দকার লতিফুর রহমান আজিম বলেন, ‘করোনার কারণে জরুরি খাদ্যপণ্য ও ওষুধ বাদে সব ধরনের পণ্যেরই চাহিদা কমেছে। আমাদের প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের পণ্যের আদেশ বাতিল হয়েছে। এমনকি যেসব পণ্য জাহাজিকরণের জন্য বন্দরে ছিল তাও ক্রেতারা বাতিল করেছেন। এর প্রভাব দেখা গেছে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানির চিত্রে। একই কারণে আমদানিও কমেছে।’ সূত্র জানান, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যের গন্তব্য হচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো। করোনার সংক্রমণ এ অঞ্চলের দেশগুলোয় বেশিই ঘটেছে। তবে সম্প্রতি ইউরোপের কিছু দেশে করোনা প্রকোপ স্থিতিশীল কিংবা কমতির দিকে। এসব অঞ্চলের কিছু দেশ ব্যবসা-বাণিজ্যের অবরুদ্ধ অবস্থা (লকডাউন) থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। ফলে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য গার্মেন্ট কারখানায় সীমিত পরিসরে উৎপাদন চালু হয়েছে। বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলা যায়, ‘আমাদের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ দুটোই মে মাসের চেয়ে জুনে আরও বাড়বে। আমদানিকারকদের তথ্যমতে আগে থেকে ঋণপত্র খুলে রাখা বেশকিছু পণ্য এ জুনে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা শুরু করেছে। আবার বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার দিতে শুরু করায় রপ্তানির ধারাও অব্যাহত রয়েছে।’ গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, সরকার ২৬ এপ্রিল থেকে কারখানা খুলে দেওয়ার কারণেই মে মাসে রপ্তানিতে সুফল এসেছে। সে ধারাবাহিকতা জুনেও অব্যাহত রয়েছে। মে মাসের চেয়ে জুনে আমদানিতে ৩০ শতাংশ ও রপ্তানিতে ২০ শতাংশ হারে বেড়ে যাবে বলে ধারণা করছেন বিজিএমইএর একাধিক পরিচালক। তাদের মতে, এখন যে অর্ডার আসছে এবং আগে যে অর্ডার এসেছে তাতে জুনেও এ ধারাবাহিকতা থাকবে। তবে পণ্য রপ্তানি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে বা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে বছর দেড়েক লেগে যাবে। সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনকারী শিপিং লাইনগুলোর তথ্যমতে, গত মার্চে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৬১ হাজার একক কনটেইনার; এপ্রিলে রপ্তানিতে ধস নেমে তা মাত্র ১৩ হাজার একক কনটেইনারে নেমে আসে। তবে মে মাসে আবার রপ্তানি বেড়ে হয়েছে ২৮ হাজার একক কনটেইনার; যা এপ্রিলের দ্বিগুণ। অনুরূপভাবে আমদানি পণ্য আসার ক্ষেত্রেও মে মাসে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। মে মাসে আমদানি পণ্য ভর্তি কনটেইনার এসেছে ৯৬ হাজার ৬০০ একক; এপ্রিলে তা ছিল ৭০ হাজার একক ও মার্চে ১ লাখ ১০ হাজার একক কনটেইনার। আমদানি-রপ্তানির মোট হিসাবে ইতিবাচক প্রভাব এসেছে। এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাব কমে আসায় দেশে দেশে স্বাভাবিক কর্মকা- শুরুর ঘোষণা আসছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ার ইঙ্গিত মিলছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী দিনগুলোয় রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়বে। পাশাপাশি বন্দরের গতিশীলতা বাড়াতে আমদানি প্রবাহের ওপর নিয়মিত তদারকির আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলছেন, খাদ্যপণ্যসহ জরুরি পণ্যের চাহিদা, সরবরাহ ও আমদানি ঠিক রাখার দিকে নজর বাড়াতে হবে।

সর্বশেষ খবর