শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

মেঘের রাজ্য নীলগিরি

আলম শাইন

মেঘের রাজ্য নীলগিরি

বৈচিত্র্যময় জেলা বান্দরবান। এখানে রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতমালা, অসংখ্য পাহাড়ি ঝর্ণা, গিরিপথ, গহিন অরণ্যসহ নয়নাভিরাম নানা স্থান। স্থানগুলো জেলা সদর থেকে খানিকটা দূর ও দুর্গম  বলে সাধারণ পর্যটকদের পক্ষে যাতায়াত প্রায় অসম্ভব। ফলে তারা নীলগিরি দেখার চিন্তাটাই করেন আগে। নীলগিরি বান্দরবান শহর থেকে ৪৭ কি.মি. দূর। ভূমি থেকে ২২০০ ফুট উঁচুতে এর অবস্থান। যেতে হয় সর্পিল আকৃতির খাড়া পথ অতিক্রম করে ফোর হুইলার অথবা ল্যান্ড ক্রুজারে চড়ে। চলার পথেই দেখা যায় উঁচু উঁচু গাছ-গাছালি। দেখা যায়, সবুজাচ্ছাদিত বিশালাকৃতির সারি সারি পর্বতমালা। পর্বতগুলো এতটাই খাড়া যে, মনে হয় চূড়া ভেঙে যেন নিজের মাথায় পড়ছে। সেই দৃশ্যে আর সুনশান নীরবতায় শরীর রোমাঞ্চিত হয় । অবাক কা- হচ্ছে, বান্দরবান থেকে দুপুর দেড়টার মধ্যে রওয়ানা দিলে ঘণ্টা দেড়ক অতিক্রম করার পরই অস্তমিত সূর্য নজরে পড়ে! অস্তমিত সূর্যের সোনালি আভার ঝিলিক ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় গাছ-গাছালির পাতায় পাতায়। অথচ তখন বিকাল ৩টা। আসলে পর্বতমালার শিখর ডিঙিয়ে সূর্য ঢলে পড়ায় এমন দৃশ্য দেখা যায়। দৃশ্যটি অভাবনীয়, উপভোগ্য!

ভয়-আনন্দ মিশ্রিত অনুভূতি নিয়েই নীলগিরির পথ। ভয়টা এই জন্য যে, চালক সামান্য বেখেয়ালি হলেই নিশ্চিত মৃত্যু! হাজার ফুট নিচে পড়তে হবে। তবে দুর্ঘটনার নজির খুব কমই এই রাস্তায়। মনে সাহস নিয়ে এগুলে  উপলব্ধি করা যায় পাহাড়ি পথ আর পাহাড়িদের জীবনযাত্রা। খুব কাছে থেকেই দেখার সুযোগ হয় তখন। এই পাহাড়ি পথ বেয়ে ঘণ্টা দুয়েক অতিক্রম করলেই মেঘের রাজ্য নীলগিরি। আর নীলগিরির চূড়ায় উঠলেই ভিন্ন অনুভূতি ধরা দেয়; নয়নাভিরাম দৃশ্যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। নজরে পড়ে পেঁজা তুলার মতো খন্ড খন্ড মেঘমালা। যাতে অনুভূত হয় এক ধরনের স্বর্গীয় আনন্দ! আর মেঘমুক্ত থাকলে নিচে দেখা যায় সাঙ্গু নদীর এঁকেবেঁকে চলার পথ; যেন একটা অজগর হেঁটে যাচ্ছে। চূড়ায় দাঁড়িয়ে বাইনোকুলারে চোখ রাখলে সামনে দেখা যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সেই সবুজ সমারোহের ভিতর দিয়ে কোনো কোনো সময় উঁকি দেয় কেওক্রাডং পর্বতের চূড়া। তবে তা অবশ্যই আকাশ ফকফকা থাকলে; নাহলে নজরে আসে না। রাতের প্রকৃতি উপভোগ করার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। চমৎকার কিছু রিসোর্ট ও হেলিপোর্ট বানিয়েছে সেনাবাহিনী। রিসোর্টগুলো প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়েই সাজানো। রিসোর্টে রাতযাপন করলে শোনা যায় হরিণ, শিয়াল ও হিংস্র প্রাণীর গর্জন। তাতে শিহরণ জাগে মনে, আর নীলগিরি ভ্রমণেও আসে পরিপূর্ণতা । লেখক: কথা সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর