শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে স্ট্রোকে মৃত্যুর পরও দাহ করতে বাধা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে স্ট্রোকে মৃত্যুর পরও দাহ করতে বাধা

চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন মদন কান্তি সুশীল মুন্না (৫০)। বুধবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ইউএসটিসি বঙ্গবন্ধু  মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুন্নাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার পরিবারের সদস্যদের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছিলেন ‘স্ট্রোকের’ কারণে মৃত্যু হয়েছে মুন্নার। কিন্তু তারপরও মুন্নার মরদেহ দাহ করতে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে পরিবারের সদস্যরা। শহরে মৃত্যুর পর বাঁশখালীতে তার গ্রামের বাড়িতে দাহ করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও প্রতিবেশীদের বাধা ও হুমকির মুখে মাঝপথ থেকেই লাশ নিয়ে শহরে ফিরে আসতে হয়েছে স্বজনদের। পরে শহরে আরও একটি শ্মশানে গিয়ে দাহ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তৃতীয় চেষ্টায় কাট্টলী মহাশ্মশানে তার দাহ সম্পন্ন করে স্বজনরা। বুধবার রাত ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোররাত ৪টা পর্যন্ত লাশ নিয়ে ছোটাছুটি করা ওই পরিবারটির সঙ্গে ছিল আল মানাহিল নামে একটি সংগঠন।

জানা গেছে, মৃত্যুর পর মুন্নার গ্রাম বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়নের শীলপাড়ায় তাকে দাহ করার সিদ্ধান্ত নেয় তার পরিবারের সদস্যরা। আল মানাহিলের সঙ্গে  যোগাযোগ করলে তাদের একটি টিম মুন্নার লাশ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাঁশখালীর উদ্দেশে রওনা করে। মাঝপথে গিয়ে তারা জানতে পারেন প্রতিবেশীদের পক্ষ  থেকে নানা হুমকি ও বাধা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুন্নার ছেলে অসীম বলেন, ‘আমরা আনোয়ারা অতিক্রম করব- এমন অবস্থায় আমার জেঠু আমাকে কল করে জানান আমাদের প্রতিবেশীরা বাধা দিচ্ছে। তারা শ্মশানে বেড়া দিয়ে দিয়েছে। বলেছে গ্রামে লাশ নিলে তারা আমাদের ঘরে আগুন দেবে।’

‘আমি বলেছিলাম গ্রামের শ্মশানে বাবাকে দাহ করব না। আমাদের নিজস্ব জায়গায় দাহ করব। তবু তারা অনড় ছিল। তারা বলেছে গ্রামে করোনা আক্রান্ত কারও লাশ  ঢোকালে আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দেবে, আগুন জ্বালিয়ে  দেবে। এসব কথা আমাদের প্রতিবেশীরাই বলছিল। তবে থানার ওসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন তারা সবরকমের সহযোগিতা করবেন। আমরা  যেন লাশ নিয়ে যাই।’ ‘কিন্তু প্রতিবেশীদের কাছ থেকে উপর্যুপরি হুমকি পেয়ে আমি ভয় পেয়ে যাই। ফলে মাঝপথ থেকেই আমরা শহরে ফিরে আসি। রাত ১টার দিকে যাই চাক্তাই এলাকার বলুয়ারদীঘি মহাশ্মশানে। কিন্তু বাবার ডেথ সার্টিফিকেট না থাকায় তারাও লাশ দাহ করতে রাজি হয়নি। পরে আমরা জেনারেল হাসপাতালে যাই লাশ নিয়ে। সেখান মানাহিলের সদস্যরা লাশ দাহর জন্য প্রস্তুত করতে সহযোগিতা করেন আমাদের। এরপর আমরা চলে যাই উত্তর কাট্টলী শ্মশানে। ভোর ৪টার দিকে  সেখানে আমরা বাবার লাশ দাহ করি।’ অসীম কুমার সুশীল বলেন, ‘আমার বাবার করোনার  কোনো উপসর্গ ছিল না। তিনি মূলত স্ট্রোক করে মারা  গেছেন। আর করোনায় মারা গেলেও সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী লাশ থেকে করোনা ছড়ায় না। অথচ বাবার লাশ নিয়ে যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আমাকে হতে হয়েছে তা খুবই ভয়ঙ্কর। আমার সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো  পৈতৃক ভিটায় আমি আমার বাবাকে দাহ করতে পারিনি।’ বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘উনারা আমাদের জানিয়েছিলেন। আমরা বলেছি লাশ দাহ করার ক্ষেত্রে সবরকম সহযোগিতা আমরা করব। পরে তারা সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করলেন। কেউ বাধা দিয়েছেন, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে করেননি। করলে আমরা অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা  নেব।’

সর্বশেষ খবর