শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় টিকাদান কর্মসূচিতে ভাটা কভারেজ কমায় ঝুঁকিতে শিশুস্বাস্থ্য

ঢাকার বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে বন্ধ টিকা কার্যক্রম অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক গ্রামে টিকাদান ক্যাম্প বসাতে দিচ্ছেন না অনেক বাড়িওয়ালা আক্রান্ত অনেক টিকাদান কর্মী

শামীম আহমেদ

করোনার কারণে সাময়িক বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হয়েছে টিকাদান কর্মসূচি। তবে সংক্রমণের ভয়ে শিশুকে নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যাচ্ছেন না অনেক অভিভাবক। এ ছাড়া অনেক বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে টিকা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। করোনা আতঙ্কে গ্রামীণ এলাকায় আগের মতো বাড়িতে টিকাদান ক্যাম্প বসাতে দিচ্ছেন না অনেক বাড়িওয়ালা। ফলে কমে গেছে ক্যাম্পের সংখ্যা। অনেক স্থানে করোনায় আক্রান্ত টিকাদানকর্মী। এসব কারণে টিকা কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। অনেক শিশু টিকা কর্মসূচি থেকে বাদ পড়ছে। বিষয়টি করোনার পাশাপাশি দেশকে নতুন সংকটের মুখে দাঁড় করাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশের ৩৭ লাখ শিশু এখন টিকাদান কর্মসূচির আওতায়। করোনার আগে গত ফেব্রুয়ারিতে যক্ষ্মা প্রতিরোধী বিসিজি টিকার কভারেজ ছিল ৯৪ দশমিক ২০ শতাংশ। এপ্রিলে এসে তা কমে হয় ৫২ শতাংশ। টিকা পায়নি ৪৮ শতাংশ শিশু। নানা কর্মসূচি নেওয়ায় মে মাসে কভারেজ কিছুটা বেড়ে হয় ৬৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। তবুও টিকা থেকে বাদ পড়ে ৩১ শতাংশ শিশু। হাম ও রুবেলা প্রতিরোধী এমআর প্রথম ডোজের কভারেজ ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯১ দশমিক ৩০ ও দ্বিতীয় ডোজের কভারেজ ছিল ৯৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। এপ্রিলে এসে তা কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৫৪ দশমিক ৯০ ও ৬০ দশমিক ২০ শতাংশে। মে মাসে কিছুটা বেড়ে হয় ৬৮ দশমিক ৯০ ও ৭০ দশমিক ৭০। একইভাবে করোনার এই সময়ে পোলিও, হেপাটাইটিস-বি, ধনুষ্টংকার, নিউমোনিয়াসহ সব রোগের প্রতিষেধক টিকার কভারেজ কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মো. হানিফ শঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, টিকাদান কভারেজ কমে গেলে নতুন সংকটের মুখে পড়বে দেশ। অনেক কষ্টে আমরা পোলিও দূর করতে পেরেছি। বিশ্বের দুয়েকটা দেশে এখনো পোলিও আছে। কোনোভাবে রোগটি আবার বাংলাদেশে ঢুকে গেলে স্বাস্থ্য খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। যক্ষ্মা, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়াসহ অন্য রোগগুলোর প্রাদুর্ভাবও বেড়ে যাবে। যে কোনো মূল্যে বাদ পড়া শিশুদের টিকা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা দিতে হবে। এলাকাভিত্তিক টিকাদান কেন্দ্র বাড়াতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন করতে প্রচারণা বাড়াতে হবে। অভিভাবকদেরও ভয় পেলে চলবে না, সচেতনতা বজায় রেখে শিশুকে টিকা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে মাস্ক পরানো যাবে না। নিরাপদ দূরত্ব ও সাবধানতা বজায় রেখে টিকা দিতে হবে। ভ্যাকসিন সেন্টারে সবার বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। প্রতিটা শিশুকে টিকা দেওয়ার পর টিকাদানকর্মীকে সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করতে হবে। টিকাদানে সাফল্যের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার পেয়েছেন। এখন করোনার মধ্যে অন্য রোগ ঢুকে গেলে সব সাফল্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। এদিকে বনশ্রীর বাসিন্দা পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী অনিকা জামান বলেন, ‘আগামী জুলাইয়ে ছেলের এমআর টিকার তারিখ। কোথায় নিয়ে যাব, কী করব বুঝতে পারছি না। বাইরে নিয়ে যেতে ভয় করছে। আবার আশপাশের হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো টিকা বন্ধ রেখেছে। ভাটারার বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তার ছেলের টিকা দেওয়ার জন্য গুলশান মা ও শিশু ক্লিনিক, লাইফলাইনসহ আশপাশের সব  বেসরকারি ক্লিনিকে খোঁজ নিয়েছি। সব জায়গায় টিকা দেওয়া বন্ধ। এ ব্যাপারে গুলশান মা ও শিশু ক্লিনিকে ফোন দিলে জানানো হয়, করোনা শুরুর পর থেকে টিকাদান বন্ধ আছে। সরকার  থেকে ভ্যাকসিন দিয়ে যাচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চালু থাকতে পারে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকাদান কর্মসূচির ব্যবস্থাপক ডা. মওলা বকশ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা শহরে টিকাদান কর্মসূচির বিষয় অন্য দফতর দেখে। গ্রামীণ এলাকার কথা বললে, করোনার কারণে এপ্রিলে টিকাদান কভারেজ অনেকটা কমে গিয়েছিল। তখন  কোথাও একজনের করোনা হলে পুরো এলাকা লকডাউন করা হতো। এখন সেটা হচ্ছে না। তাই মে মাসে কভারেজ বেড়েছে। জুনে আরও বেড়ে যাবে। এ ছাড়া এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন বাড়িতে যে টিকাদান ক্যাম্প হতো, তা এখন অনেক জায়গায় করা যাচ্ছে না। বাড়িওয়ালারা রাজি হচ্ছেন না। আমাদের অনেক টিকাদান কর্মী করোনা আক্রান্ত। ওইসব এলাকায় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সব মিলে একটু ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হলেও বাদপড়া শিশুদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করব। বাদ পড়া শিশুদের হিসাব আমাদের কাছে আছে। কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা দিতে হবে এবং বাদপড়া শিশুদের কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে সে ব্যাপারে নীতিমালা তৈরি করে সর্বত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। রেডজোন বা অন্য কোনো কারণে একান্তই কোনো শিশুর টিকা বাদ পড়লে অভিভাবকদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব শিশুটিকে টিকাদানকেন্দ্রে নিয়ে আসা। করোনা পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে কেউ জানি না। আমরা চেষ্টা করছি, অভিভাবকদেরও ভয় না পেয়ে সাবধানতা বজায় রেখে টিকাদান কেন্দ্রে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর