রবিবার, ২৮ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রকল্প বিলাসে নির্বাহী প্রকৌশলী

নিজ গ্রামে ১৭ গার্ডার ব্রিজ, শ্বশুরবাড়ির চারদিকে সৌন্দর্যবর্ধনে ৬০ কোটি টাকায় ব্রিজ নির্মাণ

সঞ্জয় দাস লিটু, পটুয়াখালী

প্রকল্প বিলাসে নির্বাহী প্রকৌশলী

বেহাল অবস্থা নির্বাহী প্রকৌশলীর করা ব্রিজের -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গ্রামীণ জনপদের টাকায় শহরে নির্বাহী প্রকৌশলীর শ্বশুরবাড়ি এলাকায় প্রায় ৬০ কোটি টাকায় ১৬টি ব্রিজ নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। প্রকল্পের নীতিমালা তোয়াক্কা না করে গ্রামীণ জনপদের আইডি ব্যবহার করে ব্রিজের স্থান দেখানো হয়েছে পৌরসভায়। এমনকি নির্মিত লোহার সেতুর দরপত্র আহ্বান করে লুটপাটের পাঁয়তারা চলছে। ব্রিজের স্থান, জরিপ, প্রাক্কলন তৈরি, প্রকল্প অনুমোদন ও দরপত্র আহ্বানের বিষয়ে পটুয়াখালী এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প কর্মকর্তা ছাড়া সংশ্লিষ্টরা কেউ কিছুই জানেন না।

নিজ গ্রামে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭টি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করছে দক্ষিণাঞ্চলীয় লোহার সেতু পুনর্নির্মাণ/পুনর্বাসন প্রকল্পের পিডি। অথচ তার উপজেলায় ২৩৯টি লোহার সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। জেলায় ১ হাজার ২০৭টি সেতুর মধ্যে ৬ শতাধিক সেতু ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুযোগী হওয়ায় চরম দুর্ভোগে মানুষ। অপ্রয়োজনীয় ব্রিজ নির্মাণে গ্রামীণ জনপদের উন্নয়ন ব্যাহত হয়ে জনদুর্ভোগ লেগেই থাকবে আর সরকারের টাকা অপচয় হবে বলেও অভিযোগ ঠিকাদার ও ভুক্তভোগীদের। টেন্ডার নোটিসে দেখা গেছে, গত ২১ এপ্রিল পটুয়াখালী এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাক্ষরিত একাধিক নোটিসে দক্ষিণাঞ্চলীয় লোহার  সেতু পুনর্নির্মাণ/পুনর্বাসন প্রকল্পের ১২টি গার্ডার ব্রিজ ও ৪টি লোহার সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ৩৭ নম্বর  নোটিসে উপজেলা পরিষদের ৫৭৮৯৫২০০৪ নম্বর রোড আইডিতে দেখা যায় পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। সেখানে খাল না থাকলেও রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার হাওলাদারের শ্বশুরবাড়ি। বাড়ির পশ্চিমদিকে জেলখানা সংলগ্ন ড্রেনের ওপর আরও দুটি গার্ডার ব্রিজের স্থান দেখানো হয়েছে। উপজেলা পরিষদ সংযোগ সড়ক আইডি দেখানো হয়েছে সদর উপজেলার আয়লা জিসি ভায়া বোতলবুনিয়া এবং খাটাসিয়া। যে স্থানগুলো পৌরসভা থেকে বোতলবুনিয়া ১২ কিলোমিটার, খাটাসিয়া ২২ কিলোমিটার ও আয়লা ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে। এভাবেই ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর নোটিসে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৪টি ব্রিজ, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৮টি ব্রিজ ও ৪টি লোহার সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কলাতলা এলাকার বাবরি মসজিদ সংলগ্ন স্থানে ২টি ব্রিজ নির্মাণের স্থান দেখানো হয়েছে। পায়রাকুঞ্জ বাজার সড়কের আইডি দেখিয়ে সেখানে উপজেলা পরিষদের রাস্তাই নেই। ওই রাস্তা সড়ক ও জনপদ বিভাগের পটুয়াখালী-পায়রাকুঞ্জ-মির্জাগঞ্জ-বেতাগী আঞ্চলিক মহাসড়ক। এ ছাড়া ৩ কোটি টাকায় ৮ ও ৯ ওয়ার্ডে আগের নির্মিত লোহার সেতুর স্থান দেখিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টাউন কালিকাপুর এলাকার বরমৃধার বাড়ি সামনে একটি ও বাসস্ট্যান্ডের রিয়াজ উদ্দিন মার্কেটের পশ্চিম পাশে আরও একটি আয়রন স্ট্রাকচার সেতু ৬ মাস আগে নির্মাণ করেছে পৌরসভা। সেখানেই ৫৭৮৯৫৪২৭৮ এবং ৪২৭৬ নম্বর রোড আইডি দেখানো হয়েছে।

একাধিকবার অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী যুগল কৃষ্ণ মন্ডল ও সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শওকত হোসাইন এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। নাম গোপন রাখার শর্তে এলজিইডির এক প্রকৌশলী বলেন, উপজেলা সংযোগ সড়ক, ইউনিয়ন সংযোগ সড়ক ও গ্রামীণ সড়কের ‘এ’ অথবা ‘বি’ নির্ণয়কৃত এলাকায় প্রকারভেদে উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। এগুলো সড়কের পরিচিতি কোড নম্বর। কিন্তু গ্রামীণ সড়কের আইডি ব্যবহার করে এর আওতার বাইরে কোনো উন্নয়নই করতে পারবে না এলজিইডি।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, আইবিআরপি প্রকল্পে গ্রামীণ জনপদে জনসাধারণের চলাচলের জন্য যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত লোহার সেতু রয়েছে সেখানে পুনর্নির্মাণ, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করবে। কিন্তু প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী এলজিইডির বাস্তবায়নে কোনো পৌরসভায় এ ধরনের উন্নয়ন কাজ করতে পারবে না। পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আরামবাগ এলাকায় নির্বাহী প্রকৌশলীর শ্বশুরবাড়ি। তাই এর চারপাশে সৌন্দর্যবর্ধন করতে ও অনৈতিক সুবিধা নিতে তা বাস্তবায়নে পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই ঠিকাদারসহ মানুষ যখন করোনাভাইরাসের আতঙ্কে আতঙ্কিত, এই সুযোগে তড়িঘড়ি করে এই টেন্ডার। গ্রামীণ জনপদের রোড আইডি ব্যবহার করে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় গার্ডার ব্রিজ তো দূরে থাক, কোনো উন্নয়ন করতে পারে না এলজিইডি। কিন্তু স্বজনপ্রীতি, অর্থের লোভ আর অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে এই টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার হাওলাদারকে ফোন করে দরপত্র আহ্বানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা না বলে সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেনকে ফোন তুলে দেন। পরে লাইনটি কেটে দেওয়া হয়। বার বার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এর আগে একাধিকবার তার অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে এ টেন্ডারের বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পরে ফোন করলে সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, ‘এখন ব্যস্ত আছি। বাসায় গিয়ে বক্তব্য দেব।’

এসব টেন্ডারের বিষয়ে অফিশিয়ালি কিছুই জানা নেই বলে এ প্রতিবেদককে জানান এলজিইডি পটুয়াখালী অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল হুদা। তবে দরপত্র আহ্বানের আগেই অনুলিপি পাওয়ার কথা থাকলেও তা তিনি এখনো হাতে পাননি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী  টেন্ডারের ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।

আইবিআরপি প্রকল্প পরিচালক আবদুল হাই বলেন, ‘উপজেলা ও জেলা থেকে প্রকল্প তৈরি করে আমার কাছে পাঠিয়েছে। কাগজ দেখে আমি পাস করেছি। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের রোড আইডি দিয়ে পৌরসভায় টেন্ডার করলে সেটা তো ঠিক করেনি। বিষয়টি আগেও আমি শুনেছি। খোঁজ নিচ্ছি। নিজের গ্রামের ব্রিজ অথচ পাশের গ্রামে ভোগান্তি কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে আপনার সমস্যা কোথায়। আমার গ্রাম কেন, পুরো মির্জাগঞ্জ উপজেলার সব ব্রিজ করব। এলাকা আপনার না। ক্ষতি করেন কেন? আপনার কী লাগবে, আসেন নিয়া যান।’

ব্রিজের গ্রাম বাজিতা : পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাজিতা চতুর্থ খ- গ্রামে আইবিআরপি প্রকল্প পরিচালক আবদুল হাইয়ের বাড়ি। তার নিজ গ্রামেই নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭টি গার্ডার ব্রিজ। অথচ তার পাশের গ্রামসহ একই উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় ২৩৯টি আয়রন ব্রিজ (লোহার পুল), যার বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব পারাপারে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ।

পটুয়াখালী এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আইবিআরপি প্রকল্পের অর্থায়নে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের ২৮ এপ্রিল স্বাক্ষরিত ৪২ ও ৪৩ নম্বর নোটিসে ১৯টি গার্ডার ব্রিজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পিডির বাড়ির চারপাশের মোনাসেফ সিকদার বাড়ি, হযরত আলী হাওলাদার ও আজাহার আলী হাওলাদার বাড়ির চারদিকে ঘিরেই অন্তত ১২টি ব্রিজ নির্মাণাধীন রয়েছে। এ ছাড়া বাড়ির অদূরে শিশুর বাজারের দক্ষিণ পাশে ১টি ও পূর্ব পাশে আরও ১টি ব্রিজের কাজ চলছে। বাজারের পূর্ব দিকে নিউমার্কেট সড়কে আরও ৩টি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণাধীন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাজিতা চতুর্থ খ- গ্রামে পিডি আবদুল হাইয়ের দৃষ্টিনন্দন ইঞ্জিনিয়ার কটেজ। তার বাসভবনের আধা কিলোমিটার বৃত্ত এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে ১৭টি গার্ডার ব্রিজ। বাড়ির দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গেলে উত্তর বাজিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই ছোট্ট একটি মরা খালে নির্মাণাধীন একটি ১৫ মিটার গার্ডার ব্রিজ। এর ১০০ গজ উত্তরে রাস্তা কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে আরও একটি গার্ডার ব্রিজ। ব্রিজের কাজে নিয়োজিত নির্মাণ শ্রমিকরা জানান, দক্ষিণ দিকে শিশুর বাজারের আশপাশে অন্তত ৮টি ব্রিজের কাজ চলছে। সেখান থেকে ৩০০ গজ দক্ষিণ দিকে এগিয়ে  যেতেই শিশুর বাজারের দক্ষিণ পাশের খালের ওপর একটি গার্ডার ব্রিজ। বাজারের পূর্ব দিকে আরও একটি ব্রিজ। আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজারের এক দোকানি বলেন, অপ্রয়োজনীয় ব্রিজ নির্মাণ করে সরকারের টাকার অপচয় করা হচ্ছে। এ এলাকায় একটি মাত্র ব্রিজ দরকার ছিল। সেখানে বহু ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। আশপাশের এলাকায় বহু ঝুঁকিপূর্ণ লোহার পুল রয়েছে, যা সংস্কার করা খুবই জরুরি। এটি পারাপারে জনগণের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। রিকশা-গাড়ি পারাপার হতে পারে না। পরিবহন ব্যবস্থা নেই তাই যে কোনো সামগ্রী মাথায় করে বহন করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে সাঁকোগুলো পারাপারে মানুষ পানিতে পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ এগুলো সংস্কার না করে নিজের বাড়ির আশপাশে উন্নয়ন করা হচ্ছে। যেখানে একেকটি ছোট কালভার্ট হলেই যথেষ্ট সেখানে তৈরি করা হচ্ছে গার্ডার ব্রিজ। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার আর সরকারি টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ তার পাশের চৈতা গ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু আর বড় বড় সাঁকো পার হয় হাজার হাজার মানুষ। সেখান থেকে পূর্ব দিকে নিউমার্কেটের রাস্তা ধরে ২০০ গজ এগিয়ে একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এখান থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত আরও তিনটি ব্রিজ। পিডির বাড়ির পূর্ব দিকে ২০০ গজ দূরে আরও ২টি ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী-সুবিদখালী ইউনিয়নের ডোকলাখালী গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে বেড়ের ধন খাল। খালের ওপর ৬০ মিটার দীর্ঘ লোহার সেতু। সিডরের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি মেরামত করা হয়নি এখনো। জরাজীর্ণ সেতুটির খুঁটি আঁকাবাঁকা হয়ে কাত হয়ে গেছে। রেলিং নেই বললেই চলে। ওপরে ছাউনি অনেক আগেই ভেঙে গেছে। এলাকাবাসীর উদ্যোগে বাঁশ-কাঠ-তক্তা ও সুপারি গাছের চেরা দিয়ে জোড়াতালির মাধ্যমে কোনো রকম চলাচল করছে হাজার হাজার মানুষ। বর্ষা মৌসুমে পারাপারে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটি। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

ডোকলাখালী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর সিকদার সেতুটি পারাপারের সময় ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘২০ বছর ধরে দেখছি এই পুলটি জরাজীর্ণ। এটি সংস্কারে কারও নজর নেই। অথচ বাজিতা গ্রামে নাকি বহু গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে পিডির বাড়ি তাই। এটা হীনমন্যতার বহিঃপ্রকাশ। উপজেলার এক গ্রামে অপ্রয়োজনীয় ব্রিজ নির্মাণ আর অন্য গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে থাকবে- এটা কেমন উন্নয়ন। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার ও এলাকাপ্রীতি ছাড়া কিছুই নয়। এ বিষয়ে সরকারের ওপর মহলের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।’ মির্জাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক মহোদয় তার নিজ গ্রাম থেকেই ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু করেছেন। আরও কয়েকটি প্রক্রিয়াধীন আছে, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।’

জেলায় ৬ শতাধিক সেতু ঝুঁকিপূর্ণ : পটুয়াখালী জেলার ৮ উপজেলায় লোহার সেতু (আয়রন ব্রিজ) আছে ১ হাজার ২০৭টি। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ লোহার সেতু রয়েছে ছয় শতাধিক। এসব লোহার পুল দিয়ে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয় জেলার কয়েক লাখ মানুষ। প্রায়ই ঘটছে হতাহতের ঘটনা।

পটুয়াখালী এলজিইডি ও উপজেলার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় লোহার সেতু রয়েছে ১ হাজার ২০৭টি। এর মধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী সেতু রয়েছে ৬০০। মির্জাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল দফতরের সার্ভেয়ার মো. জসিম উদ্দিন জানান, মির্জাগঞ্জে রয়েছে ২৩৯টি সেতু, যার বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। সদর উপজেলা প্রকৌশলী দফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) মো. আতিকুর রহমান জানান, সদর উপজেলায় ৮২টি লোহার সেতুর বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রীরামপুরে ৩টি, ছোট বিঘাইয়ে ২টি, মাদারবুনিয়ায় ২টি, হাজীখালী হাইস্কুলের সামনে ১টি, তাফালবাড়িয়ায় ১টি ও জৈনকাঠী হাইস্কুলের সামনে ১টি। এভাবেই বাউফল উপজেলায় ২৯৫টি সেতুর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ১৯৫টি, গলাচিপায় ২২০টির মধ্যে ১৩১টি ও কলাপাড়ায় ৫৩টির মধ্যে ৪০টি ঝুঁকিপূর্ণ।

এলজিইডি সূত্র ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কলাপাড়া উপজেলার লক্ষ্মীবাজার সংলগ্ন খাপড়াভাঙ্গা নদের ওপর আয়রন ব্রিজটি গত ২২ এপ্রিল রাতে জোয়ারের চাপে ভেঙে অর্ধেকাংশ পানিতে পড়ে যায়। ২৪ মার্চ সকালে একই উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের গামইরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পাখীমারা খালের ওপর গামইরতলা ৮০ মিটার দীর্ঘ আয়রন ব্রিজ ভেঙে খালে পড়ে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে। গত বছরের ১২ আগস্ট ইট বোঝাই একটি ট্রলি পার হওয়ার সময় গলাচিপার গজালিয়া এলাকার একটি লোহার সেতু মাঝখান থেকে ভেঙে নদীতে পড়ে কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। এতে অন্তত অর্ধশত গ্রামের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। দুমকি উপজেলার লেবুখালী হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের লোহার সেতুটি খুঁটি বেঁকে গিয়ে প্রায় ১ যুগ ধরে কাত হয়ে রয়েছে। রেলিং ও স্লাব না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ এলাকার হাজার হাজার মানুষ। দশমিনার খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সুতাবাড়িয়া শাখানদীর ওপর লোহার সেতুটি মাঝখানের অংশ ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর বালুবোঝাই কার্গোর ধাক্কায় ভেঙে নদীতে পড়ে পাঁচ বছরের শিশু নুসরাত জাহান মারা যায়।

সর্বশেষ খবর