সোমবার, ২৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

শাখায় গিয়ে ঋণ পাচ্ছেন না উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা

অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, সেটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, শাখায় গিয়েও অনেক ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তা প্রণোদনার আওতায় ঘোষিত তহবিল থেকে ঋণ পাচ্ছেন না। ব্যাংকের অনেক শাখা আন্তর্জাতিক রীতি-নীতির দোহাই দিয়ে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি চিঠিতে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সার্কুলারের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সেক্টর হতে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে, ব্যাংকগুলোর  কাছে প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা গ্রহণের আবেদন করলেও ব্যাংকের শাখাগুলো প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করছে না। এমন কি কোনো কোনো শাখা গ্রাহকের নিকট থেকে আবেদনপত্র গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করছে। গত ১ জুন এফবিসিসিআইর সদস্য সংগঠনগুলোর কাছে পাঠানো ওই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সর্বশেষ গত ২৭ জুন বাজেট নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম সুপারিশ করেন, যেসব ব্যাংক প্রণোদনার জন্য ঘোষিত ঋণ সুবিধা দিতে অনীহা দেখাবে, সেসব ব্যাংকে যেন সরকারি আমানত না রাখা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, শেখ ফজলে ফাহিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রণোদনার ঋণ বিতরণে কিছু ব্যাংক এগিয়ে এলেও, বড় সংখ্যাই অনীহা দেখাচ্ছে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এটি একটি অস্বাভাবিক সময়, এ পরিস্থিতিতে যেখানে অর্থনৈতিক কর্মকা- চাঙ্গা করতে ব্যাংকগুলোর এগিয়ে আসা উচিত- সেখানে অনেক শাখা আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড, নিয়ম-নীতির প্রশ্ন তুলে প্রণোদনা আওতায় ঋণের আবেদন ফিরিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে যখন বন্যা হলো, তখন অনেক ব্যাংক ঋণ সহায়তা দিয়েছে। তারা ৫, ১০, ১৫ বছরের জন্য কিস্তি করে দিয়েছে। প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আর এখন মানুষ মারা যাচ্ছে, সবকিছু স্থবির হয়ে যাচ্ছে, এ অবস্থায়ও কিছু ব্যাংক নানা নিয়ম-কানুন দেখিয়ে ঋণ প্রদানে অনীহা দেখাচ্ছে। তবে এর মধ্যেও কিছু সংখ্যক ব্যাংক এগিয়ে এসেছে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর এমডিরাও প্রণোদনা বিতরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলে স্বীকার করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ও অর্থনৈতিক কর্মকা- পুনরুজ্জীবিতকরণের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। যার অধিকাংশই ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এই প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একের পর এক সার্কুলার দিচ্ছে। উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংকগুলোকে পৃথক হেল্প ডেস্ক খোলার নির্দেশনা দিয়ে গত সপ্তাহেও আরেকটি সার্কুলার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো যাতে প্রণোদনা সুবিধা দিতে গিয়ে তারল্য সংকটে না পড়ে সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকার মতো তহবিল দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সিআরআর দুই দফায় দেড় শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে আরও ১৯ হাজার কোটি টাকা নতুন করে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে ব্যাংকগুলো। বাজেট বরাদ্দ থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার জোগান দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ব্যাংকের মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টন ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারল্য ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুতর করতে এক বছর মেয়াদি বিশেষ রেপো চালু করা হয়েছে। এতকিছুর পরও কেন ব্যাংকগুলো প্রণোদনা সুবিধা দিতে অনীহা দেখাচ্ছে? রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ও সিইও শামস্ উল ইসলাম বলেন, প্রণোদনা বাস্তবায়নে অনীহা প্রকাশ করা মূলত সরকারের ঘোষিত নীতি বাস্তবায়নে অসহযোগিতা করার নামান্তর। কারণ, মহামারীর মধ্যে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রণোদনা সুবিধা ঘোষণা করেছেন। অগ্রণী ব্যাংকের সিইও বলেন, প্রণোদনার আওতায় ঋণ আবেদন কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে মূলত কর্পোরেট শাখাগুলো থেকে। এসব শাখায় আমদানি-রপ্তানি ছাড়াও নানা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ফলে আবেদন নিষ্পত্তি করতে কিছুটা সময় লাগতেই পারে। তবে ঋণ না দেওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেসব ব্যাংক প্রণোদনা বাস্তবায়ন করবে না, তাদের সরকারের আমানত না দেওয়ার বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি যে সুপারিশ করেছেন, সেটি ঠিক আছে বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এই প্রধান নির্বাহী। তিনি জানান, প্রণোদনার আওতায় চলতি মূলধন খাতে তার ব্যাংক (অগ্রণী) সাড়ে ৯শ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকার ১৫টি আবেদন তারা বোর্ডে পাস করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। একটি আবেদন পাস হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি। এমন কি অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের স্থানীয় শাখায় মহাব্যবস্থাপকসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা করোনা পজিটিভ হওয়ার পরও কর্মকর্তাদের পালা করে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিয়ে ওই শাখায় ঋণ আবেদন নিষ্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে জানান ব্যাংকটির এমডি। তিনি বলেন, বিপর্যয় সামলাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি সক্রিয় হতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর