সোমবার, ২৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

রাতের আকাশে উড়ছে ঘুড়ি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

রাতের আকাশে উড়ছে ঘুড়ি

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে থমকে গেছে দুনিয়া। ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে জনজীবন। নেই আগের মতো কাজকর্ম। বন্ধ হয়ে গেছে বিনোদনের সব জায়গা। বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোররাও ঘরবন্দী হয়ে ভুগছে বিষণ্নতায়। বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সহপাঠী ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আগের মতো হচ্ছে না দেখা, গল্প করা এবং খেলাধুলার সুযোগ। তাই একটু বন্দীদশা থেকে পরিত্রাণ পেতে শিশু-কিশোররা বিনোদন হিসেবে  প্রতিদিনই ঘুড়ি উড়ানো উৎসবে মেতে উঠেছে। আর এমনই উৎসবে মেতে উঠেছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার শিশু-কিশোররা। শুধু দিনের আকাশে নয়, রাতের আকাশেও তারা উড়াচ্ছে শত শত রঙিন ঘুড়ি। এমন দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন উপজেলাবাসী। ঘুড়িগুলোর মধ্যে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে নানা রঙের বাতি। এ ঘুড়ি উড়ানোর দৃশ্য রাতের প্রকৃতিতে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এলাকাবাসী বলছেন, মনোমুগ্ধকর এই আয়োজন যেন এক নতুন বার্তা। করোনা পরিস্থিতিতে থমকে যাওয়া জনজীবনে স্বস্তির এক ছোঁয়া নিয়ে ধনবাড়ী উপজেলার আকাশে উড়ছে শত শত বাহারি ঘুড়ি। লাল, নীল, সাদা, কালো, হলুদ, খয়েরি এ যেন প্রকৃতির এক অবাক করা মনোরম দৃশ্য। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রামের মাঠে, শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়ির ছাদে, খোলা মাঠে এ যেন বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যে শোভিত এক রঙিন পরিবেশ। ছোট, বড়, লম্বা, চিকন অনেক রকম ঘুড়ি উড়ছে আকাশজুড়ে। অনেকে আবার একত্র হয়ে নানা ধরনের ঘুড়ি বানিয়ে বাজারেও বিক্রি করছেন। তারা তৈরি করছেন মিসাইল ঘুড়ি, কয়রা ঘুড়ি, চিল ঘুড়ি, সাপ ঘুুড়ি, চং ঘুড়ি, লন্ঠন ঘুড়ি। এসব ঘুড়িতে তারা সংযোগ করছেন বাহারি রঙের বাতি। উপজেলার কয়ড়া গ্রামের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম, জাহিদ হাসান, নাঈম আহমেদ, কৃষ্ণ সূত্রধর ও  শিমুল আহমেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের জন্য তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সব বিনোদনের জায়গা। কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না। তাই একটু মানসিকভাবে আনন্দের জন্য তারা নানা ধরনের ঘুড়ি বানিয়ে উড়াচ্ছে। তাতে তাদের অনেক আনন্দ। এ রকম বিনোদন আর কখনো পায়নি তারা। শহর থেকে আসা শিক্ষার্থী আইমন হোসাইন অদ্রি বলেন, টিভিতে ঘড়ি উৎসব দেখেছি। কিন্তু কখনো বাস্তবে ঘুড়ি উড়াইনি। এই প্রথম আমি নানুর বাড়িতে এসে ঘুড়ি উড়ালাম। অনেক মজা পেলাম। শহরের কোলাহল থেকে গ্রামের ঘুড়ি উড়ানোর অভিজ্ঞতা বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে পারব। স্থানীয় শিক্ষক শাহাদাত হোসেন জগলু বলেন, আগে দেখতাম শিশু-কিশোররা দিনের বেলাতে ঘুড়ি উড়াত। এই করোনা পরিস্থিতিতে সময় কাটানোর জন্য রাতের আকাশেও তারা ঘুড়ি উড়াচ্ছে। শত শত ঘুড়ি ছুটোছুটি করছে। এমন দৃশ্য আগে দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে ধনবাড়ী উপজেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সভাপতি আবদুল্লাহ আবু এহসান বলেন, শিশু কিশোররা দিনে ও রাতে শত শত ঘুড়ি উড়াচ্ছে। এ দৃশ্য কেউ না দেখলে বুঝতে পারবে না তা কতটা মনোমুগ্ধকর। করোনার আঁধার একদিন কেটে যাবে। সামনে আমরা করোনামুক্ত নতুন ভোর দেখতে পাব।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর