মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বিক্ষোভ পাটকল শ্রমিকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিক্ষোভ পাটকল শ্রমিকদের

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে খুলনায় রাজপথে শ্রমিকরা

সরকারি পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে খুলনা-যশোরসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল। গতকাল পাটকল শ্রমিকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে স্ব স্ব মিল গেটে কর্মস্থলে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা ব্যানার-প্লাকার্ড নিয়ে পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান।একই দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে শ্রমিক-কর্মচারীরা মিলগেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। দাবি না মানলে ১ জুলাই থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আমরণ অনশন শুরু করবেন শ্রমিকরা। এদিকে সরকারি ২৫ পাটকল বন্ধ করে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে বাড়ি পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্তে সম্মতি জানিয়েছেন শ্রমিকদের একাংশ। গতকাল বিকালে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে বৈঠক করেন পাটকল সিবিএ নেতারা। এক ঘণ্টার বৈঠকের পর সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা জানান তারা। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান জানান, পাওনা পরিশোধ ঠিকমতো হচ্ছে কি না তার পর্যবেক্ষণ করবে মন্ত্রণালয়। তবে কবে থেকে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বৈঠকে। এর আগে সকালে মিল বন্ধ না করাসহ সব পাওনা পরিশোধের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করেন পাটকল শ্রমিকরা। অব্যাহত লোকসানে টালমাটাল সরকারি ২৫ পাটকল গত রবিবার বন্ধের ঘোষণা দেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর ঘোষণা দেন তিনি। তার ঘোষণার পরই আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিক ও সিবিএ নেতারা। গতকাল রাজধানীর ডেমরায় পাটকল শ্রমিকরা বিক্ষোভ কর্মসূচি না করলেও ক্ষোভ জানান সরকারের এমন সিদ্ধান্তে। দাবি জানান, বকেয়া সব পাওনা পরিশোধের। শ্রমিকদের একজন বলেন, আমরা কোনো কিস্তি মানি না। আমাদের এক চেকে টাকা দিতে হবে কারখানা চালু অবস্থায়। আরেক শ্রমিক বলেন, আমাদের সংসার যে কীভাবে চলে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে খুলনার শিল্পাঞ্চল। গতকাল সকালে পাটকল শ্রমিকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে স্ব স্ব মিল গেটে কর্মস্থলে দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা ব্যানার-প্লাকার্ড নিয়ে ‘মিল বাঁচাও, শ্রমিক বাঁচাও’ ‘শ্রমিক না বাঁচালে, সরকার বাঁচবে না’ ‘দুমুঠো ভাত চাই, আমলাদের বিচার চাই’- এ ধরনের নানা স্লোগান দিতে থাকে। একই দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে শ্রমিক-কর্মচারীরা মিলগেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। দাবি না মানলে ১ জুলাই থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আমরণ অনশন শুরু করবেন শ্রমিকরা। খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, স্টার, প্লাটিনাম, ইস্টার্ন, দৌলতপুর, খালিশপুর, জেজেআই, আলিম ও কার্পেটিং জুট মিলে প্রায় ৮ হাজার ১০০ শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রক্ষা সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সরদার আ. হামিদ বলেন, হঠাৎ করেই মিল বন্ধ হলে এসব শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। তখন পরিবার-পরিজন নিয়ে সবাইকে পথে বসতে হবে। তিনি বলেন, ‘নানামুখী চক্রান্তে লোকসানের কথা বলে সরকারি পাটকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য পাটকলে লোকসান হয় না। মাথাভারী প্রশাসনের পরিবর্তন আনতে হবে। একই সঙ্গে মিল বন্ধের এ ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

এদিকে খুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ও শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ সম্পর্কে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে মিল বন্ধের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত নোটিস মিলগুলোতে দেওয়া হবে। এ সময় সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, পিপিপির মাধ্যমে পাটকলগুলো নতুন অবকাঠামোতে পরিচালিত হবে। ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, আগামী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত শ্রমিকরা বেতন পাবেন। এরপর পিপিপির মাধ্যমে পাটকল পরিচালিত হবে। সেক্ষেত্রে পাটকল বন্ধ হবে না ও মিলের অভিজ্ঞ শ্রমিকরাও বেকার হবেন না।   

যশোর প্রতিনিধি জানান, পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যশোরের অভয়নগর উপজেলার রাজঘাটে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ (জেজেআই) এবং কারপেটিং জুট মিলস লিমিটেডে গতকাল অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সকালে পাটকল দুটির শ্রমিকরা দুই ঘণ্টা উৎপাদন বন্ধ রেখে পরিবার-পরিজন নিয়ে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে এ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। সকালে জেজেআইয়ের ২ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে।

জেজেআইয়ের সিবিএ সভাপতি ইকবাল হোসেন খানের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন সিবিএ সাধারণ সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান চুন্নু, ননসিবিএ সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ মল্লিক প্রমুখ। একই সময়ে কার্পেটিং জুট মিলসের ভিতরে ১ নম্বর গেট চত্বরের অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন পাটকলটির সিবিএ সভাপতি বাদশা মিয়া। বক্তৃতা করেন সিবিএ সহসভাপতি মিজানুর রহমান, সহসাধারণ সম্পাদক মুজাফফর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ। অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এ সময় পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না। সরকার পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।’

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, পাটকল বন্ধের সরকারি নির্দেশনা প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন ডেমরার করিম ও লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের শ্রমিক, পাটকল শ্রমিক লীগ ও রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ও নন-সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ নেতারা। আজ এ দুই পাটকলের ভিতরে কর্মসূচি পালিত হবে বলে জানান লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের সিবিএর সাবেক কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ আলী।

লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের সিবিএর সাবেক কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও করিম জুট মিলের সিবিএর সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সিদ্ধান্ত অন্যায় ও অযৌক্তিক। এ সিদ্ধান্তে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাটকল চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পিপিপির মাধ্যমে পাটকল চালানোর পক্ষে আমরা নেই। তবে ‘নো ওয়ার্ক-নো পে’ নীতিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণেই পাটকল চলবে এমন দাবি আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর জানাব।

সর্বশেষ খবর