মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

উপসর্গ নিয়ে আরও ৩০ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরও ৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে দুজনের করোনা পজিটিভ ছিল। বাকি ৭ জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে একজন সাংবাদিক, একজন পুলিশ সদস্যসহ আরও ২৩ জন মারা গেছেন। সব মিলে গতকাল করোনা উপসর্গ নিয়ে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে একজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে একজন, কুমিল্লায় ছয়জন, নাটোরে একজন, চুয়াডাঙ্গায় একজন, ঝিনাইদহে একজন, সিরাজগঞ্জে দুজন, কুষ্টিয়ায় একজন, গাইবান্ধায় একজন, জামালপুরে একজন, রাজবাড়ীতে একজন ও বরিশালে ছয়জন মারা গেছেন। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলে ৯ জনের মৃত্যু : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রবিবার বিকাল থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন করোনা পজিটিভ। তারা হলেন- আতাহার মিয়া (৭০) ও আতাবর (৪৮)। যারা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন তারা হলেন- মো. ইসমাইল আলী (৬০), রিভা রানী (২৮), কুলসুম (৫৫), মনিরুজ্জামান (৪৮), রফিকুল ইসলাম (৪৫), হারুন উর রশিদ (৬০) ও মমতাজ বেগম (২২)।

জেলায় জেলায় ২৩ মৃত্যু : আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী- জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজশাহীতে চিকিৎসাধীন এক সাংবাদিক মারা গেছেন। তার নাম তবিবুর রহমান (৫৪)। তিনি স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদের চিফ রিপোর্টার ও বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী প্রতিনিধি ছিলেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে কাজী আলী আজগার (৮৫) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। কাজী আলী আজগার উপজেলার দলদলি ইউপির পোল্লাডাঙ্গা নতুন হাজিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার জ্বর-সর্দি, শ্বাসকষ্ট ছিল। গতকাল সকালে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সূত্র জানায়, করোনা উপসর্গ নিয়ে যারা মারা গেছেন তারা হলেন, চান্দিনার রাফেজা বেগম (৬৫) ও আতিক রাজি (৬৭), বরুড়ার তোফাজ্জল হোসেন (৫০), সদরের বিলকিস বেগম (৪৫), একই উপজেলার মমতাজ বেগম (৫৫) ও আবু তাহের (৬০)। নাটোরে করোনা উপসর্গ নিয়ে লোকমান হোসেন (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। মৃত লোকমান নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়ার মজনুর মোড় এলাকার মৃত সোলেমান প্রামাণিকের ছেলে। চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে বদরউদ্দিন (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বদরউদ্দিন দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা শ্যামপুর গ্রামের মৃত দিদার মন্ডলের ছেলে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে মুস্তাক (৫০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। রাত ১০টার দিকে মারা যান তিনি। মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। মৃত মুস্তাক কালীগঞ্জ পৌরসভার হেলাই ঈদগাহ পাড়ার মখলেচুর রহমানের ছেলে।

সিরাজগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে আবুল হোসেনের (৮০) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি শহরের মিরপুর বিড়ালাকুঠি মহল্লার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনি কয়েকদিন ধরে জ্বর ও ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছিলেন। রবিবার রাতে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে তিনি মারা যান। এদিকে সদর উপজেলার রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা রাজিয়া বেগম ঢাকায় নিজের ছেলের বাসায় থাকতেন। কয়েকদিন ধরে তিনি প্রচ- জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এ অবস্থায় রবিবার রাতে ছেলের বাসায় তার মৃত্যু হয়। কুষ্টিয়ায় আলী আহমেদ লিটন নামে এক ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তিনি শহরের চৌড়হাস এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে।  বেশ কয়েকদিন থেকে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন লিটন। রবিবার রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বিআরবি গ্রুপের হিসাবরক্ষক ছিলেন। গাইবান্ধা শহরের মধ্যপাড়ায় রবিবার রাতে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মোস্তফা লালন (৪৫) নামে একজন মারা গেছেন। তিনি গাইবান্ধা পৌরসভার মধ্যপাড়ার বাবুল মিয়ার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন থেকে চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে আসছিল। রবিবার সন্ধ্যায় তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন এবং তার তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ অবস্থায় রাতে পরিবারের লোকজন তাকে গাইবান্ধা জেনারের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য রওনা হন। কিন্তু পথেই তিনি মারা যান। জামালপুর সদর উপজেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে ইদ্রিস আলী (৫৪) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক ইলিশ মাছ ব্যবসায়ীর (৬০) মৃত্যু হয়েছে। রবিবার দিবাগত রাত সোয়া ৯টার দিকে গোয়ালন্দ পৌরসভার নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান।

বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। তারা হলেন- রবিবার সকাল ৮টার দিকে মারা যান এক নারী (৪০)। সকাল পৌনে ১০টার দিকে পৌনে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে মারা যান আরেক এক নারী (৬০)। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে এই হাসপাতালে মারা যান এক যুবক (৩৫)। রাত ১০টার দিকে মারা যান বরিশালের বাকেরগঞ্জের এক বৃদ্ধ (৭০)। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় এক বৃদ্ধা (৬২) মারা যান। এদিকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মেজবাহ উদ্দিন (৫৪) নামে পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মেজবাহ উদ্দিন পিরোজপুরের বাদুরা এলাকার মো. ফকরুলের ছেলে। তিনি বরগুনার আমতলী থানায় কর্মরত ছিলেন। জানা গেছে, গতকাল বিকাল ৪টার দিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মেজবাহ উদ্দিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির সময় রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকায় তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তার। ভর্তির পর তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। পরে সাড়ে ৪টার দিকে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

সর্বশেষ খবর