বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বর্র্ষায় পেখম মেলেছে ময়ূর

মোস্তফা কাজল

বর্র্ষায় পেখম মেলেছে ময়ূর

বর্ষার আগমনে বাহারি পেখম মেলেছে ময়ূর। ময়ূর অত্যন্ত সুন্দর পাখি। ময়ূরের নাচ কিংবা পেখম মেলার দৃশ্য মুগ্ধ করে যে-কাউকে। মনের আনন্দে কিংবা ময়ূরীকে আকৃষ্ট করার জন্য পুরুষ-ময়ূর পেখম মেলে। ময়ূরকে বলা হয় বর্ষার রানী। রাজধানীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র জাতীয় চিড়িয়াখানায় বেশ কদিন ধরে বাহারি পেখম মেলে আনন্দ নাচন করছে ময়ূর। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এই বিনোদন কেন্দ্রে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। চিড়িয়াখানার ফিল্ড সুপারভাইজার মো. সারোয়ার রনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সব মিলিয়ে এ চিড়িয়াখানায় ময়ূর-ময়ূরী আছে ১১৫টি। আগত অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ময়ূরের পেখম মেলার দৃশ্য দেখতে অপেক্ষা করেন। যে-কেউ অনুমতি সাপেক্ষে চিড়িয়াখানায় গেলেই দেখতে পাবেন ময়ূরের এমন বাহারি নাচন। গতকাল বর্ষামুখর দিনে লোকজনের আনাগোনা না থাকায় প্রতিটি খাঁচায় পেখম মেলে নেচে নেচে দিন কাটিয়েছে ময়ূর। এ ছাড়া চিড়িয়াখানার পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে ফুলের সমারোহ। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ফুলের গন্ধ। মাতাল হাওয়া পাগল করে দেয় মন।

ময়ূর তার এই সুন্দর পেখম নিয়ে জন্মলাভ করে না। তিন বছর বয়স পর্যন্ত পুরুষ ময়ূরের লেজ গজায় না। এমনকি অনেক দিন পর্যন্ত এদের স্ত্রী কিংবা পুরুষ হিসেবে আলাদা করা যায় না। ময়ূর ও ময়ূরী দেখতে একই রকম হয়ে থাকে। ছয় মাস বয়স থেকে ময়ূর রং বদলাতে শুরু করে। প্রতিবছর প্রজননের পর ময়ূর পেখম বদলায়। সে সময় পালকগুলো দেহ থেকে ঝরে পড়ে। ময়ূরের গড় আয়ু ২০ বছর। বিশাল পেখম থাকা সত্ত্বেও ময়ূর উড়তে পারে। গতকাল সরেজমিন জাতীয় চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেল, ভরা বর্ষায় পেখম মেলেছে ময়ূরগুলো। অদ্ভুত সুন্দর সেই পেখম মেলা। চলছে ময়ূরের প্রজনন মৌসুম। এ মৌসুমে স্ত্রী-ময়ূরের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নয়নাভিরাম পেখম মেলে ধরে পুরুষ-ময়ূর। ময়ূরী খুবই খুঁতখুঁতে স্বভাবের। কিন্তু পুরুষ-ময়ূরের চমৎকার প্রদর্শনের প্রতি তার রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। ময়ূরী সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রদর্শনকারী ময়ূরকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়। কিন্তু ময়ূর প্রথমে তার লম্বা পেখম সামনের দিকে বাঁকা করে পাখার মতো ছড়ায়। এরপর সে তার নজরকাড়া নাচ শুরু করে। সে যখন তার শরীর ঝাঁকিয়ে নাচে তখন পিঙ্গল বর্ণের পালকগুলো তার শরীরের দুই পাশে ঝুলে থাকে। এই ঝাঁকানির ফলে খাড়া হয়ে থাকা পালকগুলো মর্মর ধ্বনি তোলে। এ সময় পুরুষ-ময়ূর জোরে চিৎকার করে। তবে তার এ চিৎকার তেমন সুরেলা নয়। একটি পুরুষ-ময়ূর একসঙ্গে পাঁচটি পর্যন্ত ময়ূরীকে সঙ্গিনী হিসেবে রাখে। ময়ূরী প্রতিদিন একটা করে ডিম পাড়ে। এভাবে সে টানা ১০ থেকে ১৫টি ডিম পেড়ে তা দিতে বসে।

২৫ থেকে ২৮ দিন ডিমে তা দেওয়ার পর বাচ্চা ফোটে। বাংলাদেশে নীল ও সবুজ দুই প্রজাতির ময়ূরের দেখা মেলে। তবে মাঝেমধ্যে জিনগত কারণে সাদা ময়ূরের দেখা পাওয়া যায়। ময়ূর সর্বভুক পাখি। এরা মাটির গর্তে বাস করে এবং গাছে বিশ্রাম নেয়। শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এরা পায়ের নখ ব্যবহার করে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বত্র দেখা মিললেও বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রাণীর তালিকায় রয়েছে ময়ূর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর