বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

শিল্প খাতের প্রণোদনা থেকে ঋণ পাবেন ট্যানারি মালিকরা

কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে সংশোধন হচ্ছে নীতিমালা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনা মহামারীর ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে সরকার শিল্প ও সেবা খাতের জন্য যে প্রণোদনা সুবিধা ঘোষণা করেছে, কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে সেখান থেকে ঋণসুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবেন ট্যানারি মালিকরা, যার অর্ধেক (সাড়ে ৪ শতাংশ হারে) ভর্তুকি দেবে সরকার। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, করোনা সংকটের কারণে অন্যান্য খাতের মতো দেশের চামড়াশিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্যানারি মালিকরা এরই মধ্যে জানিয়েছেন, তাদের কাছে গত বছরের বিপুল পরিমাণ চামড়া আটকে আছে। আসন্ন ঈদে কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে সহজ শর্তে ঋণসুবিধা না দিলে গতবারের মতোই অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গতকাল সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করে। সভায় চামড়া কিনতে প্রণোদনার আওতায় ঋণ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এ ছাড়া কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে চামড়া খাতও একটি। এ কারণে শিল্প খাতের জন্য যে প্রণোদনা সুবিধা আছে, সেখানেই তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত ঋণসুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ট্যানারি মালিকদের ঋণ দিতে ঘোষিত প্রণোদনার নীতিমালা সংশোধন করে সেখানে কাঁচা চামড়া খাত অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ বিষয়ে একটি সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ে দ্রুত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। ১২ এপ্রিল শিল্প ও সেবা খাতের জন্য যে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়, সেখানে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো এই তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে বড় শিল্পোদ্যোক্তাদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। এর মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ পরিশোধ করবে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান। বাকি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে। প্রণোদনা সুবিধার মধ্যে ট্যানারিশিল্প অন্তর্ভুক্ত হলে তারাও এই সুবিধায় ঋণ পাবে। তিন বছরের কিস্তির কথা বলা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সার্কুলার অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সূত্র জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সভায় কাঁচা চামড়া কিনতে ট্যানারিশিল্পের পক্ষ থেকে আগের নেওয়া সব ঋণ একটি ব্লক অ্যাকাউন্টে রেখে সম্পূর্ণ নতুন করে ৬০০ কোটি টাকার ঋণসুবিধা দাবি করা হয়। এর আগে গত বছর নতুন ও পুরনোসহ (নবায়ন করে) মোট ৬৯০ কোটি টাকার ঋণসুবিধা দেওয়া হয়েছিল, যার একটি বড় অংশ এখনো অপরিশোধিত রয়ে গেছে। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মহামারীতে তাদের খাতটি বিপর্যস্ত হলেও তারা মূলত ২০১৭ সাল থেকেই সংকটে আছেন। বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, কোনো ধরনের অবকাঠামো সুবিধা ছাড়াই ট্যানারি শিল্পকে জোর করে সাভারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালে। সেখানে কেন্দ্রীয় পরিশোধনাগার (ইটিপি) না থাকায় কাঁচা চামড়ার বর্জ্য পরিশোধনে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয়। এর ফলে কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা দেশের চামড়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তিন বছর ধরে চলমান সংকটের পর এবার করোনা মহামারী আরও বেশি বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। উপরন্তু রাজধানীর হাজারীবাগে ট্যানারি মালিকদের যে সম্পদ ছিল, রাজউক কর্তৃক ‘রেডজোন’ ঘোষণার কারণে সেই সম্পদ কাজে লাগাতে পারছেন না ট্যানারি মালিকরা। সেখানে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে জানিয়ে চামড়াশিল্পের এই উদ্যোক্তা বলেন, ওই সম্পদ কাজে লাগাতে পারলেও চামড়াশিল্প কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর